‘ব্যক্তিগত’ কারণে সরে দাঁড়ালেন তারা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ করে প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আসন বণ্টন জটিলতার কারণে অভিমানে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- দলটির অভ্যন্তরে এমন কথা শোনা গেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা বলছেন ভিন্ন কথা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ শুরু থেকেই দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। কিন্তু দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং হাবিব-উন-নবী খান সোহেল নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
দলীয় সূত্র জানায়, আবদুল আউয়াল মিন্টুকে ফেনী-৩ ও ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়া হয়। আর হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের চাওয়া ছিল ঢাকা-৮ আসনটি। কিন্তু তাকে ঢাকা-৯ আসন থেকে প্রার্থী হতে দলের একটি প্রভাবশালী মহলের পক্ষ থেকে বলা হয়। তিনি তা প্রত্যাখান করেন। কারাবন্দি সোহেলের পক্ষ থেকে দলের প্রাথমিক মনোনয়নপত্র কেউ গ্রহণ করেননি বলে জানা গেছে।
গত ২৬ নভেম্বর সোহেলের মেয়ে জান্নাতুল এমি সূচনা তার ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ঢাকা-৮ ছাড়া আর কোথাও থেকে নির্বাচন করবেন না বাবা, শেষ সিদ্ধান্ত, আপস না।’
‘নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বিএনপি নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল’ ২৮ নভেম্বর এমন একটা সংবাদের লিংক শেয়ার করে সূচনা আরেকটি পোস্টে লেখেন, ‘এমন না যে আসন দেয়া হয়নি... একাধিক আসনের প্রস্তাব ছিল, কিন্তু আমাদের দাবিতে আমরা আপসহীন ছিলাম। কষ্ট..., যোগ্যতার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে ...। অমানবিকতার বিজয়।’
অন্যদিকে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনের পছন্দের আসন ছিল ঢাকা-১৩। এই আসন থেকে এর আগেও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবার তাকে দেয়া হয়েছে বরিশালে। সে কারণে তিনি কিছুটা মনোক্ষুণ্ন হন। এরপরও বরিশাল-৫ আসনটি ছিল তার দ্বিতীয় পছন্দ। কিন্তু তাকে বরিশাল-২ থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়ায় তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তবে সরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটা ব্যক্তিগত নীতির কারণে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আমি মনোনয়নপত্র জমা দেইনি। কারণ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না, সে কারণে আমি আমার মনোনয়নপত্র জমা দেইনি।’
আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে দলের একটি সূত্রের দাবি, তার ব্যক্তিগত সমস্যা রয়েছে, পাশাপাশি বিএনপির মতো একটা বড় দলের নির্বাচন পরিচালনার জন্য সিনিয়র নেতা দরকার। সে কারণে আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
অপরদিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করা হয়েছে। আবদুল আউয়াল মিন্টু নির্বাচন পরিচালনার ওই কমিটিতে যুক্ত হবেন। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলেই তিনি তার প্রার্থী প্রক্রিয়া থেকে সরে গেছেন।
দলীয় নেতাদের প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়া থেকে সরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।’
দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সরে যাওয়ার বিষয়ে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে কী ধরনের বার্তা যাবে- এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, ‘দলের সবাই নির্বাচন করবে, এমন তো কথা নয়।’
কেএইচ/জেডএ/বিএ