যে কারণে বিএনপির আট শতাধিক মনোনয়ন
>> গুম হয়ে যেতে পারেন নেতারা : আশঙ্কা খন্দকার মোশাররফের
>> হামলা-মামলা-সাজা-প্রার্থিতা বাতিলের ভয়ে আট শতাধিক মনোনয়ন
>> সরকারের আচরণের ওপর কৌশল নির্ধারণ : মোস্তফা মহসিন মন্টু
নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির ধূম্রজাল ততই বিস্তৃত হচ্ছে। নির্বাচন, ভোট এখন ‘কৌশল’ রাজনীতিতে আটকা। সরকার চাইছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, তবে সে নির্বাচনে বিরোধীপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থানে থাকুক। এ কারণে নানা কৌশলের ফাঁদে বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টকে ফেলতে চাইছে সরকার।
বিশেষত ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের শেষ পর্যন্ত কী হাল হয়, তাই নিয়ে ধন্দে দেশবাসী।
সরকারের কৌশলের জাল ছিঁড়তে বিএনপিও এখন মরিয়া। টানা এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি এখন ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকা’ মনে করছে। ফলে চলমান সংকট উত্তরণে সর্বোচ্চ কৌশল অবলম্বন করছে দলটি। নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ মেনে প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে নিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। বলেন, ‘সরকার একটি পাতানো নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে, ২০১৪ সালের মতো। এবার ভিন্ন কৌশল নিয়ে একতরফা নির্বাচন করে ফের ক্ষমতায় আসতে চাইছে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা সরকারের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির জনপ্রিয়তা সরকারের মধ্যে দিনদিন হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণেই সরকার জুলুম আরও বাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে বিএনপির শতশত নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছে। রাজনৈতিক মামলায় অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপিকে মাঠছাড়া করতেই সরকার নিপীড়ন করছে।’
‘আমরা মনে করছি, সামনের দিনে সরকার আরও নির্যাতন চালাবে। ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এ সময় মনোনয়নপ্রত্যাশী আরও অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন, কারও কারও মনোনয়ন বাতিল হতে পারে। আশঙ্কা করছি, গুম হয়ে যেতে পারেন নেতারা। এ কারণেই আমরা প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে বলেছি।’
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গতকাল আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে তাতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আপাতত নির্বাচনে অযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে। আজ বিএনপি নেতা ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে সাজা দিয়েছেন আদালত। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকেও সাজা দেয়া হয়। দেশে ফিরেই গ্রেফতার হন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন। সূত্র জানিয়েছে, মামলা আর গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে আছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক নেতাও।
তারা বলছেন, সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে নির্বাচন কমিশন বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের প্রার্থিতা বাতিল করে দিতে পারে। অনেকের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করে দিতে পারে। আবার কেউ কেউ ভয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। শেষ পর্যন্ত প্রতিটি আসনে প্রার্থী রাখতেই বিএনপির আট শতাধিক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন।
বিএনপির এ কৌশলে সায় দিয়েছে ঐক্যফ্রন্টও। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা জোট করেছি বিশেষ চ্যালেঞ্জ নিয়ে। মানুষ পরিবর্তন চাইছে। আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এ কারণেই নানা কৌশল নিয়ে আমাদের এগোতে হচ্ছে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছে।’
‘সরকারের আচরণের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যকার আলোচনার মধ্য থেকেই’- যোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত দুদিনে ২০ দলীয় জোটের শরিকসহ প্রায় ৮০০ প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেয় বিএনপি। প্রতিটি আসনের একাধিক প্রার্থী রাখায় মনোনয়নের চিঠি নিয়ে রয়েছে অসন্তোষও। তবে ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী কে হচ্ছেন তা ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত জানা যাচ্ছে না। ওই দিনই প্রতীক বরাদ্দের জন্য ইসিকে শেষ চিঠি দেবে বিএনপি।
প্রথম দিনে বরিশাল, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রত্যয়নের চিঠি ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুর বিভাগের অনেকে মনোনয়নের চিঠি পান। দ্বিতীয় দিন গতকাল ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের প্রার্থীদের প্রত্যয়নের চিঠি দেয়া হয়।
প্রার্থী মনোনয়নে ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচিত প্রার্থী এবং পুরনো নেতাদেরই প্রাধান্য দিয়েছে বিএনপি। জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থী পরিচিতি পেয়ে যারা দলের মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়েছিলেন, তাদেরও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অবশ্য ঢাকায় অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
এএসএস/এমএআর/জেআইএম