ভোটে নেই সাকা পরিবার!
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে ১৪টি আসনে ৩২ জনকে প্রাথমিক মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে বিএনপি। ১২টি আসনেই রাখা হয়েছে বিকল্প প্রার্থী। দুটি আসন খালি রাখা হয়েছে ২৩-দলীয় জোটের জন্য। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোট নিয়ে বিএনপির যখন এত প্রস্তুতি, তখন প্রাথমিক মনোনয়নেও ঠাঁই হয়নি দলটির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের কোনো সদস্যের।
নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরুর পর থেকেই চট্টগ্রামের অন্তত ৩টি আসনে (রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি) সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন বলে জোর প্রচারণা ছিল। এমনকি এ তিনজনই বিএনপির মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছিলেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শওকত আলী নূর ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন বাহার। ফটিকছড়ি আসনে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের সাবেক সভাপতি ডা. খোরশেদ জামিল। রাউজানে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন গিয়াস কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরী, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন শিকদার ও উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফরিদা আক্তার।
এ পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন-এমন প্রার্থীদের মধ্যে শুধুমাত্র রাউজান আসনে সামির কাদের চৌধুরীই আছেন, যিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্য। সামির কাদের চৌধুরী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে।
তবে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বিএনপির একটি রাজনৈতিক কৌশল। শেষ দিকে এসে অন্তত একটি বা দুটি আসনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করা হতে পারে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের প্রার্থী হতে পারেন। কারণ রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে সাকা পরিবারের আলাদা একটি ইমেজ রয়েছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও এসব আসন থেকে কয়েকবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি প্রদানের অভিযোগে কারাগারে থাকা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরীকে সামনে নিয়ে আসার পেছনেও এই যুক্তি কাজ করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের মনোনয়ন না দেয়, তবে ধরে নিতে হবে রাজনীতির মাঠে বিএনপির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি হিসেবে যে প্রচারণা আছে তা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে দলটি। আগামী দিনের রাজনীতিতে যা বিএনপির জন্য নতুন দিকের উন্মোচন করবে।
তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ চট্টগ্রামে বিএনপির নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘কী হচ্ছে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১০ দিন।’
উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী চারটি আলাদা রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে ছয়বার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ থেকে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার দুটি আসন থেকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে রাউজান আসনের জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আবারও রাউজান আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এনডিপি থেকে।
১৯৯৬ সালে বিএনপির প্রার্থী রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে নির্বাচন করে রাঙ্গুনিয়ায় বিজয়ী হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ২০০১ সালের নির্বাচনে আবারও রাঙ্গুনিয়া থেকে বিজয়ী হন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফটিকছড়ি থেকে বিজয়ী হলেও রাঙ্গুনিয়াতে হেরে যান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে যারা মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন তার মধ্যে দুটিতে বিএনপির একক প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। বাকি ১২টি আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছে বিএনপি।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন নুরুল আমিন, কামাল উদ্দিন আহমেদ ও মনিরুল ইসলাম ইউসুফ। চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে মোস্তফা কামাল পাশা ও নুরুল মোস্তফা খোকন। চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ও নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি এনামুল হক এনাম। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে সামির কাদের চৌধুরী, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন শিকদার ও উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফরিদা আক্তার।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে শওকত আলী নুর, আবু আহমেদ হাসনাত ও অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে উত্তর জেলা বিএনপি নেতা ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি সালাহ উদ্দিন ও কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক ও ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন।
এসআর/পিআর