ভিডিও কনফারেন্সে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তারেক
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। লন্ডন থেকে স্ক্যাইপির মাধ্যমে মনোনয়ন বোর্ডে যুক্ত হয়েছেন তিনি।
রোববার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হয়।
সাক্ষাৎকার শেষে বেরিয়ে আসা কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে স্ক্যাইপির মাধ্যমে তারেক রহমানও লন্ডন থেকে যুক্ত রয়েছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি তারেক রহমান নিজেও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রশ্ন করছেন নানা বিষয় নিয়ে।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী টি এম মাহবুব বলেন, প্রথমবারের মতো মনোনয়ন বোর্ডে সাক্ষাৎকার দিতে এসেছি। মনোনয়ন না পেলেও ধানের শীষের জন্য কাজ করবো। তারেক রহমানসহ মনোনয়ন বোর্ড থেকে আমাদের এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দিনাজপুর-২ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমার আসন সম্পর্কে মনোনয়ন বোর্ড আমাকে কিছু ডাটা জিজ্ঞেস করলে আমি আমার সাধ্যমতো উত্তর দিয়েছি। এরপর দেখলাম আমার গ্যাপগুলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঠিক করে দিলেন। বুঝতে পারলাম আমার চেয়ে বেশি ডাটা তার কাছে রয়েছে।
গাইবান্ধা-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী খন্দকার আহাদ হোসেন বলেন, স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারেক রহমান যুক্ত রয়েছেন মনোনয়ন বোর্ডে। তিনি সার্বক্ষণিক সবকিছু মনিটরিং করছেন।
এদিকে ঝামেলা এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জন্য যেসব নির্দেশনা দিয়েছিল বিএনপি তার প্রায় সবগুলো মেনে চলেছেন তারা। দলটির পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে বলা হয়েছিল- যারা মনোনয়ন ফরম পূরণকরে দলের প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন, তাদেরই কেবল সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। সাক্ষাৎকারের সময় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন না। সমর্থকদের সঙ্গে করে আনলে, তা অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং আশপাশে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও আমন্ত্রিতরা ছাড়া অন্য কেউ থাকতে পারবেন না।
তবে সংশ্লিষ্ট মহানগর ও জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ সাক্ষাতের সময় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে থাকতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকগণও উপস্থিত থাকতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা গুলশানে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা, মিছিল মিটিং, শো-ডাউন এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেন সাজানো-গোছানো পরিবেশ নষ্ট না হয়।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রথম ৪ ঘণ্টা এসব নির্দেশনার সবকটিই অনুসরণ করা হয়েছে। গুলশান কার্যালয়ের সামনে কোনো শোডাউন নেই। বিকল্প গেট দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঢোকানোর ব্যবস্থা করায় মূল সড়কে কোনো ভিড় জমেনি। ভেতরে ঢোকার জন্য কোনো ঠেলাঠেলি নেই। আসন ধরে ধরে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভেতরে ডেকে নেয়া হচ্ছে। কারো নামে কোনো স্লোগান দিচ্ছে না কেউ।
বিএনপি ঘোষিত সূচি অনুযায়ী রোববার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত রংপুর বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলবে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। ১ ঘণ্টা বিরতির পর দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলবেন তারা।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা ৩০মিনিট পর্যন্ত বরিশাল বিভাগ এবং ২টা ৩০ থেকে খুলনা বিভাগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেবে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। সাক্ষাৎকারের জন্য নির্ধারিত সময় ও তারিখ অনুযায়ী হাজির হতে হবে। নির্ধারিত সময় ও তারিখ মতো উপস্থিত হতে না পারলে তিনি আর সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না।
মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কথা শুনবে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলবেন বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা।
সাক্ষাৎকার গ্রহণের শেষ দিন বুধবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলবে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। এরপর যথারীতি ১ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে ঢাকা বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরসঙ্গে কথা বলবে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হতে চান ৪ হাজার ৫৮০ জন। ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এরা সবাই দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
কেএইচ/এমবিআর/এমএস