শাহাদাৎ-বক্কর দুজনই চান ধানের শীষ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রেস্টেজিয়াস কোতোয়ালি (চট্টগ্রাম-৯) আসনে নগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ধানের শীষ প্রত্যাশা করছেন। যদিও দুজনই গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বক্করের পক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।
একই আসন থেকে দুজনের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেনের একান্ত সহকারী মারুফুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বক্করের একান্ত সচিব এস এম শহীদ ইকবাল।
যদিও এর আগে কোতোয়ালি আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান নির্বাচন করতেন। কিন্তু এবার তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন চাইছেন।
গ্রেফতারের আগে জাগো নিউজের কাছে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসন থেকে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বক্কর দুজনই।
ওই সময় বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ‘কোতোয়ালি-বাকলিয়া আমার এলাকা। এ আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। দল যদি নির্বাচনে যায় আমি এখান থেকে নির্বাচন করবো, তা নিশ্চিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ম্যাডাম আমাকে এ আসন থেকে নির্বাচন করতে বলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে মেয়র নির্বাচন করার জন্য প্রার্থী হইনি। দীর্ঘ ৩২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দল-মত-নির্বিশেষে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। কোতোয়ালি-বাকলিয়া বিএনপির দুর্গ। এ আসনে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষই বিজয়ী হবে।’
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর বলেছিলেন, ‘বিএনপি একটা বড় রাজনৈতিক দল। বিএনপি নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। এর আগে দাবি হচ্ছে বিএনপি নেত্রীর মুক্তি। তারপর আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। অতীতের মতো চট্টগ্রাম-৯ আসনে বিএনপি জয়ী হবে বলে আশা করছি। যদি দল চায় তাহলে এ আসন থেকে আমি নিজেও নির্বাচন করতে প্রস্তুত।’
তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, নগরের শীর্ষ দুই নেতা একই আসনে নির্বাচন করতে চাওয়ায় তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ আসনে জিততে হলে অবশ্যই দলকে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
চট্টগ্রামে একটি প্রবাদ চালু আছে, ‘কোতোয়ালি আসনে যারা জেতে, তারাই সরকার গঠন করে।’ স্বাধীনতার পর থেকে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলছে। চট্টগ্রাম–৯ সংসদীয় আসনটি সিটি কর্পোরেশনের ৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৩৯ হাজার ৯১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩০ হাজার ১৪৭ এবং মহিলা ভোটার এক লাখ নয় হাজার ৭৬৭ জন।
ইতোমধ্যে এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ২৬ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার ছেলে মুজিবুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীরা।
তবে শেষপর্যন্ত জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু। জোটের বাইরে গিয়ে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে তার জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দলটি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ চট্টগ্রাম সফরে এসে বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়া উদ্দীন আহমেদ বাবলুকে এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন দেয়ার ঘোষণা দেন।
তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার, লিংক রোড, সড়ক প্রশস্ত করাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। তাই এবার চট্টগ্রাম নগরে কোনো ছাড় নয়। তারা মনে করছেন, উন্নয়নের এ জোয়ারে নগরের সব আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করা সম্ভব। এবার আর দলের বাইরের কাউকে নগরের গুরুত্বপূর্ণ আসনটি ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।
আবু আজাদ/এমএআর/এমএস