আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি!
দলের মধ্যে মতভেদ থাকলেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে বিএনপির অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতারা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দলটির মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সার্বিক বিষয় নিয়ে দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আজ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী মূল পরিকল্পনা তৈরি করতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রভাবশালী নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দেড় ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করেন তারা। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েকজন নেতা দ্বিমত পোষণ করলেও অবশেষে এ বিষয়ে সবাই ঐক্যমতে পৌঁছান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় দলীয় চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবর্তমানে দলীয় মনোনয়নে স্বাক্ষর করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ ছাড়া আজকের বৈঠকে নির্বাচনী ইশতেহার, মনোনয়ন, প্রচার-প্রচারণার কৌশল, দায়-দায়িত্ব বন্টনসহ সার্বিক বিষয়ে নির্বাচনী পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করবেন বিএনপির নীতি-নির্ধারনী নেতারা। এরপরে খসড়া কপি নিয়ে বসবেন ২৩-দলীয় জোট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গেও আলোচনায় প্রয়োজনের কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। মতামত নেয়া হবে জেলা নেতাদেরও।
সূত্র আরও জানায়, নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ শিরোনামে যে খসড়া পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছিলেন, সেটির অবলম্বনে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রাথমিকভাবে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত, যাদের রদবদলের সম্ভাবনা কম। এই তালিকায় দলের সিনিয়র নেতারা আছেন। এর বাইরে আরও শতাধিক আসনেও প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই হয়েছে। তবে সেটা চূড়ান্ত নয়। তাদের যোগ্যতা ও স্থানীয় জনপ্রিয়তা যাচাই করা হবে।
তবে ২৩-দলীয় জোটের শরিকদের পাশাপাশি জোট ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের জন্যও আলাদা করে আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে ওইসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি।
নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি থাকলেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে অধিকাংশ নেতারা।’
বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে ওই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের সময় কিছু ভাড়াটে-হাইব্রিড নেতার উৎপত্তি হয়। নির্বাচনে না গেলে সেক্ষেত্রে ভাড়াটে-হাইব্রিড নেতাদের দিয়ে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ দেখানো হতে পারে। এ ছাড়া নিবন্ধন ঝুঁকি তো আছেই, পাশাপাশি বিএনপি জোটের অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে।’
তিনি বলেন, ‘মাঠের আন্দোলন না জমিয়ে সরাসরি নির্বাচনে গিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায় না। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে ভোটের আগে আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে চাপে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপশি অব্যাহত রাখা হবে কূটনৈতিক চাল।’
ওই নেতা আরও বলেন, ‘সরকার যদি নির্বাচনের পরিবেশ ব্যাহত করে তাহলে দেশে-বিদেশে প্রমাণিত হবে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। প্রমাণিত হবে বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি জোটের অংশ না নেয়া সঠিক ছিল। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারলেও ভোটের আগে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে অন্তত শতাধিক আসনে বিএনপির বিপুল বিজয় হবে।’
ভোটের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন-সংক্রান্ত বিশদ আলোচনার জন্য লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
তবে রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচন- সেই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পারবেন? শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে তিনি আজীবন প্রধানমন্ত্রী আর খালেদা জিয়া আজীবন জেলখানায় থাকবেন। তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন না। তাই বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাব না।’
এদিকে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না। এই নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই, শুধু সরকারকে বৈধতা দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে না গেলে বিএনপির যেসব প্রার্থী নির্বাচনে যেতে চান, তারা মনঃক্ষুণ্ন হতে পারেন। সবমিলিয়ে অনেক বিষয় পর্যালোচনা হয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শনিবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
অন্যদিকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, জিয়া পরিবারকে রাজনীতির বাইরে রেখে কিছু করার চেষ্টা হলে সিনিয়র নেতাদের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ হবে।
কেএইচ/এসআর