অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না জাতীয় পার্টি
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে প্রাদেশিক সরকারসহ আট দফা দাবি উপস্থাপন করেছে জাতীয় পার্টি। একইসঙ্গে কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না দলটি।
সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের ৩৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন।
সংলাপ শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্মিলিত জাতীয় জোটের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সংলাপ অত্যন্ত সফল হয়েছে। আলোচনা অত্যন্ত সন্তোষজনক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আট দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে।
রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সংলাপে আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলেছি। তবে, নির্বাচন অবশ্যই সংবিধানের আলোকে হতে হবে। কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই না, কারণ ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের তথাকথিত অনির্বাচিত সরকার লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের অনির্বাচিত সরকার মাইনাস টু ফর্মুলায় দেশের শীর্ষ নেতাদের রাজনীতির মাঠ থেকে বিতারিত করতে চেয়েছে।
তিনি বলেন, একটি দলীয় বা জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের অধীনে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে আমরা তার প্রতিশ্রুতি চাই এবং বাস্তবে তার প্রতিফলন আশা করি। বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছি। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করার প্রস্তাব করেছি। তবে তাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকবে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকেই আমরা এই প্রস্তাব করেছি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব রাখার প্রস্তাব করছি। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে জনমনে একটা দ্বিধা-সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এটি একটি আধুনিক পদ্ধতি হলেও ভোটাররা এখনো ইভিএম ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করার পর ইভিএম ব্যবহার করা হোক। এবার ইভিএম ব্যবহার না করাই ভালো হবে।
রুহুল আমিন বলেন, আমাদের একটি সংস্কার কর্মসূচির প্রস্তাব আছে। সেটা হচ্ছে- প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন। দেশের সচেতন মানুষ মাত্রই এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এই ১৭/১৮ কোটি মানুষের দেশ পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই প্রতিশ্রুতি প্রত্যাশা করি- আগামী সংসদে আমরা এই প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের আইন পাস করবো।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা দেয়ার পর কে নির্বাচনে আসবে বা কে আসবে না- তা দেখার কোনো অবকাশ নেই। ব্রিফিংয়ের শেষ মুহূর্তে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে, সারপ্রাইজ আসতে পারে।
হাওলাদার বলেন, আলোচনা একটি চলমান প্রক্রিয়া, আমাদের প্রেসিডিয়ামে আলোচনা শেষে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটি ছোট্ট পরিসরে আলোচনা করবো এবং দলের চেয়ারম্যান সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
সংলাপ শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মধ্যহ্নভোজ অথবা নৈশভোজে অংশ নিতে তার বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জবাবে প্রধানমন্ত্রী সময়-সুযোগ মতো তিনি এই আমন্ত্রণে অংশ নেবেন বলেও জানান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
সংবাদ সমম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সুনীল শুভরায়, এসএম ফয়সল চিশতী, সুলেয়মান আলম শেঠ, আতিকুর রহমান আতিক, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এমএ মতিন, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম নুরু, সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ইয়াহ ইয়াহ চৌধুরী এমপি, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন এমপি, আমির হোসেন ভূঁইয়া এমপি, যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, দিদারুল কবির দিদার, মো. নোমান মিয়া।
এইউএ/বিএ