সংলাপ নিয়ে আগে যা বলেছি তা ছিল পলিসি ম্যাটার : কাদের
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে না বলে আওয়ামী লীগ নেতারা নানা সময় মন্তব্য করলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংলাপ নিয়ে এর আগে আমরা যা বলেছি তা ছিল আমাদের পলিসি ম্যাটার।’
মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে সংলাপের সময় দিয়েছেন। বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরীক দল। ওই দিন গণভবনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যকে সংবিধান বিরোধী আখ্যা দিয়ে ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুর সঙ্গে গতরাতে ফোনে আলাপ করেছি। কোনো কোনো পত্রিকায় দেখতে পেলাম আমি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেছি। এটা সর্বৈব মিথ্যা। আমি এমন কিছু বলিনি। বরং আমি মন্টু সাহেবকে বলেছি, আপনারা কয়জন আসতে চান। তিনি প্রাথমিকভাবে আমাকে বলেছেন, তারা ১৫ জন আসতে চায়। আমি বললাম, ১৫ জন কেন ২০/২৫ জনও আসতে পারেন। ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।’
সংলাপটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংলাপে কতজন আসবেন সেই তালিকা আজকে আমাদের অফিসে জানাবেন, এমনটাই মোস্তফা মহসীন মন্টু আমাকে জানিয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের কতজন থাকবে -জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা কতজন আসে লিস্টটা দেখি এরপর আমাদের কারা থাকবে সেটা আমরা পরে ঠিক করব।’
সংলাপ নিয়ে আগের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের দলের নেতারা আমরা একই ভয়েসে কথা বলি। আমাদের পলিসি সরকার ও দলের যা ছিল তাই বলেছি। আমরা কিন্তু শিফট করিনি, শিফটের বিষয় নয়। এটা তো এমন নয়, দেশে একটা প্রতিবাদের ঝড়, দেশে একটা আন্দোলন মুখর অবস্থা। এই অবস্থায় সরকার নতি স্বীকার করে সংলাপে বসেছে, বিষয়টি তা নয়।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে ড. কামাল হোসেন সাহেব ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমাদের পার্টির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। গতকাল ক্যাবিনেট মিটিংয়ের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় নেত্রী বলেছেন- আমাদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে চান, শেখ হাসিনার দরজা তো কারো জন্য বন্ধ হয় না। আমার দরজা খোলা আছে। দেখা করতে চান, চিঠি দিয়েছেন, আমি দেখা করব। বিষয়টি এমন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাদের ৭ দফা দাবির মধ্যে কিছু আছে সংবিধান সংশোধনের বিষয়, কিছু আছে আইন আদালতের বিষয়, আবার দু’একটি বিষয় আছে এটি সম্পূর্ণই নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। সংলাপ নিয়ে এর আগে আমরা যা বলেছি সেটা আমাদের পলিসি ম্যাটার। সেটা সরকার ও দলের পলিসি ম্যাটার। এখন তারা দেখা করতে চান, ৭ দফা ও ১১ দফা লক্ষ্য নিয়ে আলাপও করতে পারেন, এখানে নিঃশর্ত। আমরা বলিনি যে, এই বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে হবে, এই বিষয় নিয়ে আলাপ করা যাবে না।’
সংলাপের পর ডিনারের (রাতের খাবার) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘খোলামেলা পরিবেশে আলাপ আলোচনা হবে, তা না হলে তো আমরা ডিনারের ব্যবস্থা করতাম না।’
তিনি বলেন, ‘দাবি-দাওয়াগুলো (৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য) এখন টেবিলে আসবে। সেখানেই আলোচনা হবে। চিঠির সঙ্গে তারা ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সংযুক্ত করেছেন। কাজেই এটাকে আমার নাকচ করার সুযোগ নেই।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে ইতোপূর্বে কোনো সংলাপ হয়নি জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ দিক থেকে বিষয়টি এক্সসেপশনাল, এক্সট্রা অর্ডিনারি ডিসিশন, এটা আসলে একটা সারপ্রাইজ, প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ।’
জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের শরীক, জামায়াতের কোনো নেতার উপস্থিতি কোন দৃষ্টিতে দেখবেন -জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন তো কিছুদিন আগে বলেছেন যে, জামায়াতের সঙ্গে আমি নেই। তিনি কী করেন দেখি। এখানে নিবন্ধনের বাইরে বোধ হয় কারো আসার সুযোগ নেই।’
ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের নিবন্ধন নেই। তিনি ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা। সংলাপে তার উপস্থিতির সম্ভাবনা আছে কিনা -এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা ড. কামাল হোসেন সাহেবের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ জন্যই বলেছি ২০/২৫ জনও আসতে পারেন তারা।’
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে সরকারের হাত আছে কিনা -এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশটা বিচিত্র দেশ। এখানে রাজনীতির যে কত ধারা, উপধারা, শাখা-প্রশাখা! কত যে গুজব আর গুঞ্জন! গুজব ও গুঞ্জনের বিশাল ফ্যাক্টরি আছে এখানে। কত কথা বলা হয়, যার সাথে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই।’
ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন কিনা -জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন সংলাপের কোনো সুযোগ নেই। কীভাবে করব বলেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সিডিউল ঘোষণা করলে, কীভাবে...।’
নির্বাচনকালীন সরকার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই নির্বাচনকালীন সরকার হয়ে যাবে। বিষয়টি একান্তই প্রধানমন্ত্রীর উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে এই মন্ত্রিসভা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
আরএমএম/আরএস/পিআর