বিএনপিতে একাকার ঐক্যফ্রন্ট!
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রার পর থেকে নতুন এ জোটকে বিএনপির মুখোশ হিসেবে দাবি করে আসছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামে আজকের সমাবেশ সে বিষয়টি যেন আরও পরিষ্কার করে দিল। সমাবেশের অনুমতি নেয়া থেকে শুরু করে উপস্থিতি, এমনকি মঞ্চের দখল। সবখানেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে যেন পুরনো বিএনপিকেই দেখা গেল।
২০ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে সমাবেশের আবেদন করেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন। এরপরে অনুমতি না পেয়ে সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান। এছাড়া জনসভা বাস্তবায়নের পুরো কাজটি করেন নগর বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এসবের প্রভাবও ছিল আজকের সমাবেশ জুড়ে। শুধু মাত্র সভামঞ্চে বসা কয়েকজন নেতা ছাড়া আর কোথাও আলাদাভাবে চেনার উপায় ছিল না ঐক্যফ্রন্টকে।
সমাবেশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হলেও গতকাল সন্ধ্যা থেকেই সমাবেশ স্থলের আশপাশে ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপি কর্মীরা তাদের নিজ নিজ নেতাদের ব্যানার-পোস্টার লাগাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। সমাবেশেকে কেন্দ্র করে সভাস্থলের আশপাশ ছেয়ে যায় বিএনপি ও ছাত্রদল-যুবদলের কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি চেয়ে ব্যানার পোস্টারে। সমাবেশে অনেক বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখা গেছে দলের নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ হাতে। ছিল ‘এমপি হিসেবে দেখতে চাই’, শিরোনামে বিভিন্ন নেতার নাম ও ছবি সম্বলিত পোস্টার-ব্যানারও। যদিও শুধু এ একটি দলের বাইরে কোনো দল বা সংগঠনের ব্যানার চোখে পরেনি আশপাশে।
বিপত্তিটা আরও বড় হিসেবে দেখা দেয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা মঞ্চ উঠার পর। এ সময় সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। বক্তব্যের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো নেতার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন। বক্তব্য শুরু হলেও অনেক ক্ষেত্রে থামেনি স্লোগান। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বক্তব্য দেয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের স্লোগানের জন্য তাদের বক্তব্য বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়াও যখনি বক্তব্য দিতে গেছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের এমন আচরণে বেশ বিব্রত হতে দেখা গেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের।
একপর্যায়ে মঞ্চ থেকেই ঘোষণা আসে, এটি বিএনপির সমাবেশ নয়, ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ। খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের স্লোগান বন্ধের আহ্বান জানান। দুই কানে আঙুল দেখিয়ে নেতাকর্মীদের বক্তব্য শোনার পরামর্শ দেন তিনি। শেষ চেষ্টা করেন স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও। এরপর আবারও স্লোগান দিতে শুরু করলে রেগে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
বিএনপিতে একাকার ঐক্যফ্রন্টের বিষয়টি সরকার যেন শুরু থেকেই টের পেয়েছিল। তাইতো গত পাঁচ বছর যেভাবে বিএনপিকে তাদের দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের বাইরে যেতে দেয়নি, তেমনি নতুন মোড়কে আসা ঐক্যফ্রন্টকেও সেই নাসিমন ভবনের রাস্তাতেই এনে দাঁড় করিয়েছে সরকার। এ নিয়ে অবশ্য সমাবেশে বেশ উষ্মা প্রকাশ করেছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ডা. কামাল হোসেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হেসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামী আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর আগে বেলা ২টা থেকে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরে দেড়টার পর কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠের মধ্যদিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। সমাবেশের কারণে কাজীর দেউড়ি নূর আহমদ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আবু আজাদ/জেএইচ/এমএস