জোট সম্পর্ক ছিন্ন করে যা বললো ন্যাপ-এনডিপি
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।
মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানের একটি হোটেলে এ ঘোষণা দেন ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি।
সংবাদ সম্মেলনে এনডিপি চেয়ারম্যান গোলাম মোর্ত্তজা, ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, এনডিপি মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে এনডিপির কোনো নেতা বক্তব্য দেননি।
গানি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বে জোটের শরিক হিসেবে আমরা সাধ্যমত অবদান রাখার সচেষ্ট ছিলাম। নিজেদের মতবিরোধ ও মতপার্থক্য থাকলেও জোটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব সময়ই ছিলাম আন্তরিক। এমনকি ২০১৪ সালের নির্বাচনে নানা ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব থাকার পরও জোটের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো কেউ তৎকালীন ১৮ দলীয় জোট ত্যাগ করেন নাই। এই ত্যাগকে বিএনপি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে কোন রকম মূল্যায়ন করেছেন বলে আমাদের কাছে কখনোই প্রতিয়মান হয় নাই। বরং তাদের ভাবখানা এরকম তারা যাবে কোথায়?
গতকাল সোমবারের ২০ দলীয় জোটের বৈঠকেও বিএনপির উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বলেছেন তাদের উপর আজকে যে ঝড় কিংবা রাজনৈতিক চাপ তা শুধু মাত্র ২০ দলীয় জোটের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। এই জোট না থাকলে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হতো না।’
ন্যাপ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের কারণে কেউ চাপে থাকুক সেটা আমরা প্রত্যাশা করি না। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে এই দলগুলো তাদের পাশে ছিল বলেই তারা তাদের অনেক ব্যর্থতার কিছু ভাগ দিতে পারেন, না থাকলে তাও পারতেন না।’
গানি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত থাকলে আমরা তা পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যের নামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামক একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দুঃখজনক হলেও সত্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করতে গিয়ে বিএনপি ও তার নতুন বন্ধুরা যে সব ঘটনার অবতারণা করেছেন তা সত্যিই দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নায়কদের আচরণ সমগ্র জাতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও হতাশ করেছে। সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই ধরনের আচরণ রাজনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত। ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব বিএনপির নেতৃস্থানীয় প্রবীণ নেতাদের কাছে জাতি বা কোনো রাজনৈতিক কর্মী এই ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করে না।’
গানি বলেন, ‘এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে যাদের অগ্রণী ভূমিকা আমরা লক্ষ্য করেছি তারা প্রায় সবাই ১/১১ অরাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদের অনেকেই মাইনাস টু ফর্মূলা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমন কী বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে যে মামলায় কারাগারে রয়েছেন সে মামলার দায়েরের নেপথ্য নায়ক, ফখরুদ্দিন, মঈনউদ্দিন সরকারের উপদেষ্টারা যখন বিএনপির পাশে অবস্থান করে তখন আমরা ব্যথিত হই, আতঙ্কিত হই। ১/১১ কুশীলবদের যখন আমরা বিএনপি নেতাদের পাশে অবস্থান করতে দেখি তখন আতঙ্কিত হই এই ভেবে যে শুধু মাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা কী আরেকটি অগণতান্ত্রিক ও অশুভ শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্রের অংশ হতে যাচ্ছি কিনা?’
ন্যাপ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে। শুধুমাত্র ক্ষমতার পালা বদলের নামে কোনো অশুভ শক্তির ক্ষমতা গ্রহণ করে আবারও দেশকে রাজনীতি শূন্য করার কোনো অপচেষ্টায় অংশগ্রহণ করুক তা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা প্রত্যাশা করি না। অন্যদিকে এই সব বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি সব সময়ই তার শরিকদের অন্ধকারে রাখার অপচেষ্টা গ্রহণ করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রতিয়মান। সেই বিষয়েও বিএনপি তার শরিকদের পরিষ্কার অবস্থা ব্যাখ্যা করে না। জোটের বিভিন্ন বৈঠকে জোট শরিকদের মনোনয়নের বিষয়টি সামনে আনতে চাইলেও বিএনপি কৌশলে তা এড়িয়ে যায়। আর ১/১১ কুশীলব, মাইনাস টু ফর্মূলা বাস্তবায়নকারীরা যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে তখন আমরা মনে করি বিএনপি তার সব নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হচ্ছে।’
গানি বলেন, ‘এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ২০ দলীয় জোট শরিক হিসেবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি সাংবিধানিক, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থে আজকে এই মুহূর্ত থেকে জোটের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করছে। আমরা নতুন করে পথ চলতে চাই। প্রকৃত দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য চাই।
তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাই চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একটি কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপনি অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করুন। যার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে একটি সুস্থ ধারা প্রতিষ্ঠিত হবে। সবাই মিলে আগামী দিনে একটি সুখি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবো।’
‘বিএনপি জোট ত্যাগ করে অন্য কোনো জোটে ন্যাপ ও এনডিপি যোগ দেবে কিনা’ এমন প্রশ্নে গানি বলেন, ‘এখনই সে উত্তর দেয়ার সময় আসেনি।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘২০ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তারা জোট সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
কেএইচ/জেএইচ/এমএস