তারেকের ফাঁসি চেয়ে আপিল চায় আ.লীগ
২১ অাগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে অাওয়ামী লীগ অখুশি নয় তবে পুরোপুরি সন্তুষ্টও নয়। রায় হওয়ার পরপরই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে এক প্রতিক্রিয়ায় এমনটি জানিয়েছেন দলের নেতারা।
নেতারা বলছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে এই রায়ে তারেক রহমানের ফাঁসির দণ্ড না হওয়া আমরা মানতে পারছি না। তারেক রহমানকে এই হামলার প্ল্যানার বা মাস্টারমাইন্ড আখ্যায়িত করে আপিলে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। এ জন্য সরকারকে আপিল করার অনুরোধ করেছেন নেতৃবৃন্দ।
এই রায়কে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসানাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদারসহ বিভিন্ন স্থরের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
রায়ের পরে শাহে আলম মুরাদ বলেন, জাতির বহুল প্রত্যাশিত রায়ে মানুষ খুশি হয়েছে। আমরাও অখুশি, তা বলছি না। তবে ঘটনার শূল নায়ক বাইরে থাকায় কষ্ট পেয়েছি। প্রত্যাশা ছিল, তারেক রহমানের ফাঁসি হবে।
পাশেই আলাদা সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ সভাপতি মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ প্রমুখ।
এ সময় মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তারা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে গ্রেনেড হামলা চালায়। তারা রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায়। এরা সন্ত্রাসী সংগঠন, জঙ্গি সংগঠন। কানাডার ফেডারেল কোর্ট রায় দিয়েছে, বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন। আজকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হয়েছে, এতে তারেক রহমানের যাবজ্জীবন হয়েছে। তারেক রহমান মূলহোতা-মাস্টারমাইন্ড। তাকে ফাঁসি দিলে খুশি হতাম। আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমাদের দাবি, বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বলেন, আমরা যুবলীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী প্রত্যাশা করেছিলাম গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের ফাঁসি হবে। কিন্তু তার যাবজ্জীবন হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, আপিল করে মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে। যাতে করে কেউ এমন ঘৃণিত কাজ করতে সাহস না দেখায়।
তিনি বলেন, তারপরও সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, দীর্ঘ সময় পর হলেও ঘৃণিত এই মামলার রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়েছে সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাসী।
১০ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাবেক মুুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। এই রায়ের ফলে আর কেউ এমন ঘটনা ঘটনোর সাহস পাবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে এটি। তবে মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের ফাঁসি না হওয়ায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা পুরোপুরি খুশি হতে পারিনি। সরকারের কাছে আবেদন জানাবো, আপিল করে মূলহোতা তারেক রহমানের ফাঁসি নিশ্চিত করা হোক। কারণ, ঘটনার শূলে ছিল তারেক রহমান।
রাজধানীর এরশাদ মার্কেটের সামনে ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু নেতৃত্বে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানীর প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী ও ডেমরার স্টাফ কোয়াটারের সামনে সর্তক অবস্থায় ছিলেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মাতুয়াইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল খানসহ আরো অনেক। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এবং পাড়া মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মিছিল করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ। রায় ঘোষণার পরে এসব সংগঠনের পক্ষে থেকে আনন্দ মিছিল করা হয়। এসব মিছিলে - যাবাজ্জীবন বিধান নাই, তারেক রহমানের ফাঁসি চাই.... এইমাত্র খবর এলো বাবরের ফাঁসি হলো....ফাঁসি ফাঁসি চাই তারেক জিয়ার ফাঁসি চাই...ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এফএইচএস/জেডএ/এমএস