গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কেউ জড়িত ছিল না : ফখরুল
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কেউ জড়িত ছিল না- এমন দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মামলায় জড়িয়েছে। আমি হলফ করে বলতে পারি, তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর- তারা কেউ ২১ আগস্ট হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কারণ, যে কোনো হত্যাকাণ্ডের একটা মোটিভ থাকে। এই হামলায় বেনিফিশিয়ারি (সুবিধাভোগী) কে হয়েছে? আওয়ামী লীগ হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটাকে ইস্যু করে বিএনপিকে ধ্বংস করছে, বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে।’
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ জেহাদ দিবস উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে ‘শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদ।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ ঘটনার সঠিক তদন্ত যদি করা হত, তাহলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসত। তারেক রহমান ও বিএনপিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়ানোয় প্রমাণ হয়েছে যে, সরকার রাজনেতিক উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা ব্যবহার করেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গ্রেনেড হামলায় দলটির ২৫ নেতাকর্মী নিহত হওয়ার পর আমরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলাম। আমাদের নেত্রী, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঢাকার বাইরে ছিলেন। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার মিটিং বন্ধ করে ঢাকায় ফিরে আসেন।’
‘ফিরে এসে তিনি সুধা সদনের তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তখন তাকে বলা হলো, ওখানে যাবেন না, ওখানে ছাত্রলীগ ঘিরে রেখেছে এবং আপনাকে ওখানে যেতে দেবে না'- বলেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর সে সময়ের সরকার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছিল। তারাই তো মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করেছিল এবং আমেরিকা থেকে এফবিআই, তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারপোলের তদন্ত টিম নিয়ে আসা হয়েছিল তদন্ত করার জন্য।’
‘আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন কিন্তু বিএনপি, তারেক রহমান বা আব্দুস সালাম পিন্টুকে দোষারোপ করেননি। উনি (শেখ হাসিনা) যখন সাব জেলে ছিলেন এবং সেখানে আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) যখন এই মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে যান, তখন তিনি বিএনপিকে দোষারোপ করেননি, তারেক রহমানকে দোষারোপ করেননি- দোষারোপ করেছেন শুধু সেনাবাহিনীকে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই গোটা পরিস্থিতি বদলে গেল’-যোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট আমলে চার্জশিট দেয়া হয়েছে, সেখানে তারেক রহমানের নাম ছিল না। প্রায় ৬১ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণের পর আইও চেঞ্জ করে আবার নতুন করে আইও দেয়া হলো কাহার আকন্দকে। তিনি একজন রিটায়ার্ড (অবসরপ্রাপ্ত) পুলিশ কর্মকর্তা। চাকরি হারিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ থেকে। তাকে আবার চাকরিতে ফিরিয়ে এনে আইও করা হলো।’
মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডে রেখে নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে- অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘একসময় সে (মুফতি হান্নান) আদালতকে বলেছিল, অত্যাচার করে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘এই যে ভয়ঙ্কর একটা ঘটনা, যার একটা সুষ্ঠু তদন্ত হওয়ার দরকার ছিল, প্রকৃত আসামিদের বের করে নিয়ে এসে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা দরকার ছিল। তা না করে কী করল সরকার? তারা রাজনৈতিকভাবে পুরো বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে তারেক রহমান ও আব্দুস সালাম পিন্টুসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের জড়িত করল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন তারই সূত্র ধরে তারা (ক্ষমতাসীন দল) বারবার একই রেকর্ড বাজাচ্ছেন- এর সঙ্গে পিন্টু জড়িত, তারেক রহমান জড়িত, বিএনপি জড়িত।’
‘প্রতিটি মামলায়, প্রতিটি ঘটনায় তারা এই কাজ করছে। প্রকৃত আসামিকে না ধরে, তারা সব দোষ বিএনপির ওপর চাপাচ্ছে- এই বিষয়গুলো সবার মনে রাখা দরকার। সবার বোঝা উচিত, এটা একটা চক্রান্ত। এ চক্রান্ত শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুরু। তারপর আবার শুরু ১/১১- এর পর থেকে।’
ফখরুলের অভিযোগ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শন সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে দিয়ে তার ধারক-বাহক খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এমনকি এখন শুরু হয়েছে ফিজিক্যালি তাদের সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত।
জেহাদ স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলম প্রমুখ।
কেএচ/এসআর/এমএস