ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

তফসিলের আগে বিএনপির ৭ দাবি, ১২ লক্ষ্য

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:২১ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এতদিন বিএনপি সোচ্চার থাকলেও তা থেকে ইউটার্ন নিয়েছে দলটি। এখন তাদের দাবি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের।

রোববার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় আগামী একাদশ নির্বাচন এবং সরকার গঠন করতে পারলে লক্ষ্য কী হবে তা নিয়ে দলটি তাদের অবস্থান তুলে ধরে। এতে তারা নির্দলীয় সরকারের দাবির পরিবর্তে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে।

জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষে ৭টি দাবি এবং ১২টি লক্ষ্য উল্লেখ করে দুদিনের সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ই-মেইলে প্রথমে প্রথমে ৮ দফা দাবির কথা উল্লেখ করে বিএনপি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার সংশোধনী দিয়ে আরেকটি ই-মেইলে ৭টি দাবির কথা জানানো হয়।

bnp

বিএনপি ঘোষিত দাবিনামায় বলা হয়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সেই লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে নিম্নবর্ণিত দাবিসমূহ পূরণ করতে হবে।

(১) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার

(২) জাতীয় সংসদ বাতিল করা

(৩) সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা

(৪) যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা ।

 (৫) সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা

 (৬) নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ না করা

(৭)  ক) দেশের বিরোধী-রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার

(খ) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনী ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সকল রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা

(গ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করার নিশ্চয়তা

(ঘ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সকলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা।

bnp

এছাড়া তাদের ১২ দফা লক্ষ্যগুলো হলো

(১) রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা।

(২) রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

(৩) রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

(৪) স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।

(৫) স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনীকে আরও আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা।

(৬) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

(৭) কঠোরহস্তে দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও অধিকতর কার্যকর করা।

(৮) সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা।

(৯) সকলের সাথে বন্ধুত্ব এবং কারো সাথে বৈরিতা নয়- এই মূলনীতিকে অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে পারস্পরিক এবং সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।

(১০) কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় না দেয়া এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া।

(১১) (ক) নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি নির্ধারণ ও আয়ের বৈষম্যের অবসানকল্পে সমতাভিত্তিক নীতি গ্রহণ করা এবং সকলের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকার-ভাতা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্যবীমা চালু, কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, শিল্প-বাণিজ্য ও কৃষির সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত ও আধুনিক করা।

bnp

(খ) স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক এবং উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জীবনমুখী শিক্ষানীতি চালু করা, প্রযুক্তি- বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে মানবসম্পদের উৎকর্ষ সাধন করা, জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

(গ) তৈরি পোশাক শিল্পের অব্যাহত উন্নয়ন এবং শিল্প ও রফতানি খাতকে বহুমুখী করা, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে উন্নয়নের ধারাকে গ্রামমুখী করা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, ঝুঁকিমুক্ত ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিভার বিকাশ ও তাদের আধুনিক চিন্তা চেতনাকে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া।

(১২) সব প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন করা।’

কেএইচ/বিএ/আরআইপি

আরও পড়ুন