ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

একলা চলো নীতিতে বিএনপি

খালিদ হোসেন | প্রকাশিত: ১০:০৭ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এক বছরের বেশি সময় পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। গত বছরের ১২ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস উপলক্ষে যে সমাবেশ করা হয় সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর আর কোনো জনসভা করতে পারেনি দলটি।

অবশেষে নির্বাচনকে সামনে রেখে রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) জনসভার অনুমতি পায় বিএনপি। সাত দাবি আর ১২ দফা লক্ষ্য ঘোষণা হবে এ জনসভায়। বিএনপির এ জনসভায় জামায়াত ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমন কি যুক্তফ্রন্ট ও বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার শরিক নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

বিএনপির জনসভায় ২০ দলীয় জোটের শরিক বা বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা অংশ নেবেন কি না-জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জনসভায় দেখতে পাবেন।’

অপরদিকে বিএনপির জনসভায় ২০ দলীয় জোটের শরিক নেতারা যোগ দেবে কিনা জানার জন্য ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রাকিব এবং ন্যাপ বাংলাদেশের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ‘এ জনসভা বিএনপির একক কর্মসূচি। এখানে আমরা থাকছি না, পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে জনসভা হবে।’

জনসভা সফল করতে ইতোমধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরী এবং আশাপাশের জেলাগুলো থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জনসভায় আসতে বলা হয়েছে।

শনিবার রাত ১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘জনসভার জন্য সোহরাওয়ার্দী সাবির্ক প্রস্তুতি চলছে।’

এদিকে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লন্ডনে নির্বাসনে রেখে নির্বাচনের ঠিক আগ মূহর্তের জনসভায় কি বার্তা দেবে বিএনপি? এমন আলোচনায় এখন সরব রাজনৈতিক অঙ্গন। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার স্বার্থে অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার দাবির মুখে বিএনপি শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার ঘোষণা দেবে, নাকি কৌশলী ভূমিকা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি আপাতত সামাল দেয়ার চেষ্টা করবে সেদিকে এখন দৃষ্টি সবার।

ইতোমধ্যেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনসভার ঘোষণা সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘জনসভায় আগামী দিনের কর্র্মপরিকল্পনা ঘোষণা হবে।’

দলীয় সূত্র জানায়, দলের ব্যানারে আয়োজিত এ সমাবেশ থেকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলের চিন্তা ও অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরবে বিএনপি। সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ বাতিল, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার; সব রাজবন্দীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের নামে চলমান মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়া, পুরানো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশের অভিযোগ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারদের মুক্তি; সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন; ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন; নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করা; সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন এবং নির্বাচনে ইভিএম প্রয়োগ হতে বিরত থাকা।

এ সাত দাবির সঙ্গে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে কী করবে তা নিয়ে ১২ দফা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উপস্থাপন করবে বিএনপি। সেগুলো হলো- রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা, প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দলীয়করণের বদলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা; স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সশস্ত্র বাহিনীকে আরো আধুনিক ও শক্তিশালী করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ, কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে মদদ না দেওয়া, কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া এবং আয়ের বৈষম্য অবসানকল্পে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ; পাশাপাশি রাজনৈতিক গুণগত মানোন্নয়নে রাষ্ট্রপতি ও প্রধনমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে বিএনপির এ জনসভা থেকে।

বিএনপির এ জনসভার পর ড. কামাল হোসেন এবং ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে। ঐক্য প্রক্রিয়ার দলগুলোর পক্ষ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত ইসলামীকে নিয়ে আপত্তি ওঠায় ২০ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের এ জনসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগদানের জন্য বিএনপির একক ঘোষণাও আসতে পারে।

দুই দফা পেছানোর পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি মেলে বিএনপির। প্রথমে গত বৃহস্পতিবার এবং পরে গত শনিবার জনসভার জন্য অনুমতি চায় বিএনপি। কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার জন্য আবেদন করা হয়। পরে ২২ শর্তে সোহরাওয়াদী উদ্যানে জনসভার অনুমতি দেয় মহানগর পুলিশ। অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই বিএনপি মঞ্চ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক তৎপরতা শুরু করে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা জনসভা স্থল পরির্দশন করেন।

দফতর সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১২টায় সম্মিলিত গণসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে জনসভা শুরু হবে। বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস কর্মীরা গণসঙ্গীত পরিবেশন করবেন। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের পাশে উত্তরমুখী করে ২৪-৫০ ফুট আকারে জনসভার মঞ্চ বানানো হচ্ছে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন। প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ সভা সঞ্চালনা করবেন। সার্বিকভাবে জনসভা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং আমান উল্লাহ আমান।

কেএইচ/এনডিএস/এমএস

আরও পড়ুন