আসুন আন্দোলন শুরু করি : ফখরুল
ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের আন্দোলন শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সভার মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে আমরা একধাপ এগিয়ে গিয়েছি ঐক্যের পথে, আমরা আশা করবো দ্রুত সেই ঐক্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে আহ্বান জানাব আসুন আমরা ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ে একটা আন্দোলন শুরু করি। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করবো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে এবং একইসঙ্গে সমস্ত রাজবন্দি যারা আছেন তাদের মুক্তি দিতে এবং এদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য করতে হবে। সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
একইসঙ্গে সবাইকে এই আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মানুষকে তাদের হারিয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার বেঁচে থাকার অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য একতাবদ্ধ হয়ে এই মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন। শুধু একটি কারণে সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছেন সেটা হলো পরিবর্তন দেখতে চান, এই সরকারের পতন দেখতে চান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চান।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘ দেশনেত্রী কারাগার থেকে আমাদের খবর পাঠিয়েছেন যে কোনো মূল্যে আজকে ঐক্য তৈরি করে এই দুঃশাসনকে সরাতে হবে। আমার কী হবে না হবে সেটার এক ব্যবস্থা হবে।’
সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞ আলোচকরা আজকে পরিষ্কারভাবে বলেছেন দেশে এখন দুঃশাসন চলছে। এই দুঃশাসন আমাদের স্বাধীনতার সব স্বপ্নকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ব। তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার জন্য নীল নকশা করছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর প্রাণ গিয়েছে। আমাদের পাঁচশ’র মতো নেতাকর্মী গুম হয়ে হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত ৭৯ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে ৩ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। উদ্দেশ্য একটাই এই আন্দোলন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা এবং আগামী নির্বাচনে জনগণ যাতে অংশ নিতে না পারে সেজন্য এই মামালা তারা নতুন করে শুরু করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারকে যদি আমরা সরিয়ে দিতে না পারি। জনগণের সরকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, জনগণের ঐক্যের সরকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি তাহলে এই দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘সেজন্যই আজকে যে দাবি-দাওয়া এসেছে প্রায় সমস্ত দলগুলোর দাবি একই এসেছে। আমরা দেখেছি যে প্রধান শর্ত হচ্ছে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, এই পার্লামেন্ট রাখা চলবে না এবং নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন, যে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তাকে আবার পুনর্গঠন করে যোগ্য কমিশন গঠন করতে হবে। একইসঙ্গে আমরা বলেছি সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আমরা আরও বলেছি ইভিএম পদ্ধতিতে এই দেশের মানুষ পরিচিত নয়, তাই ইভিএম পদ্ধতি কোনোমতেই এই নির্বাচনে প্রয়োগ করা যাবে না।’
এ সময় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া সমাবেশের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে নতুন পথ দেখাচ্ছেন। তিনি তার ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আজকে জাতির এই চরম দুর্দিনে, যখন জাতি একটি মুক্তির পথ খুঁজছে তখন তিনি একটি পথ দেখিয়ে জনগণকে সামনে নিয়ে আসলেন।’
এজন্য ড. কামাল হোসেনকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
কেএইচ/জেএইচ/জেআইএম