গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই আমাদের প্রতিজ্ঞা : এইচ টি ইমাম
সুষ্ঠু, অবাধ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিজ্ঞা বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শান্তিতে বিজয়, শান্তি জিতলে জিতবে দেশ’ শীর্ষক এক জাতীয় ক্যাম্পেইনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইউএসএআইডি ও ইউকেএইড’র যৌথ অর্থায়ন এবং ‘ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত ক্যাম্পেইনে ৪০টি জেলার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় ৪০০ নেতা রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সম্প্রীতির সমর্থনে এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে অঙ্গীকার করেন।
উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আমরা উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ চাই। সেই সঙ্গে চাই গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ এমন একটি দেশ যে দেশ সারাবিশ্বের আদর্শ হবে। এটি আমাদের লক্ষ্য। আমরা সুষ্ঠু, অবাধ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আমাদের প্রতিজ্ঞা। আমরা আশা করি, আমাদের দলের এবং আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে আমরা কখনও পিছপা হবো না। অতীতেও হইনি, ভবিষ্যতেও হবো না।’
তিনি বলেন, ‘এই যে অগ্রগতিগুলো ধীরে ধীরে হয়েছে। এগুলো আমরা খুব সচেতনভাবে লক্ষ্য করি না। কিন্তু আমি যেহেতু এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই লক্ষ্য করি এবং দেখি আমরা কত দূর এগিয়ে গেছি। আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি, এটি তো বিনা কারণে হয়নি। এ দেশের মানুষ, সবাই অংশগ্রহণ করেছে বলেই এটি হয়েছে। এই উন্নয়নের পেছনে প্রাইভেট সেক্টর, জনমত ও সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সরকার দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আমাদের দূরে তাকানোর মতো ক্ষমতা থাকতে হবে যে, আমরা ভবিষ্যতে কী রকম বাংলাদেশ চাই।’
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা, বাংলাদেশ যেমন উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ চাই তেমনি সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ এমন একটি দেশ চাই যেটি সারাবিশ্বের আদর্শ হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময়ই আক্রান্ত হয়েছে। আমি সেসব ঘটনাগুলো বলতে চাই না। কিন্তু আমরা কখনও কাউকে পাল্টা আক্রমণ করিনি।’
তিনি বলেন, ‘সব দলের সব নেতা, সবার কাছে আমি দাবি করতে পারি যে, আমি একজন বর্ষীয়ান মানুষ। কাজেই এদিক থেকে সবার কাছে অনুরোধ করতে পারি, আমরা ভুল ও মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকব। বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা থেকে বিরত থাকব। আমরা সত্য কথা বলব। সত্যকে সত্য বলব। সাদাকে সাদা বলব। কালোকে কালো বলব। যিনি অন্যায় করছেন সেটি তুলে ধরবো।’
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘সেইসঙ্গে অনর্থক আমরা কাউকে গালি দেবো না। কারও প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ কথাও বলবো না এবং মিথ্যা প্রচারও করবো না। এগুলো যদি আমরা পালন করি, বাস্তবে প্রয়োগ করি তাহলে আমি বিশ্বাস করি, ইনশাল্লাহ আগামীতে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন শান্তিতে করতে পারবো, আনন্দে করতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু নিজে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। সেইজন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ। এই জনযুদ্ধে সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু জনযুদ্ধের প্রস্তুতিটি দীর্ঘকালের। এই প্রস্তুতিকালে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং যুদ্ধের আহ্বানটি করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাদের গণতন্ত্রের কথা প্রথম শিখিয়েছেন। তিনিই শিখিয়েছিলেন আমাদের শান্তির কথা। তিনিই শিখিয়েছিলেন আমাদের প্রগতির কথা।’
‘এ কথা ভুললে চলবে না যে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অশান্তির বীজ অনেকেই বুনেছেন। বিশেষ করে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন কীভাবে দেশকে পিছিয়ে নেয়া যায় অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে বিনাশ করা যায়। এতো কিছুর পরও আজ বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, এটি অবশ্যই জনগণের দ্বারা হয়েছে। কিন্তু নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের চিন্তাভাবনা অবশ্যই উন্নয়নমূলক ছিল। তাদের দূরদৃষ্টির কারণেই এ উন্নয়ন।’
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে যে ইশতেহার দিয়েছিলাম আমরা সেটিকে গতানুগতিক কোনো ইশতেহার বলিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি জেলে থেকেই অনেকগুলো উদ্ভাবনী জিনিস লিখেছিলেন। পরবর্তীতে সেটি রূপ নেয় রূপকল্প-২০২১। সেখানে প্রথম কথাই বলা হয়েছিল, দিন বদলের সনদ। অর্থাৎ আমরা দেশকে উন্নয়নের পথে, অগ্রগতির পথে নিয়ে যাব। কিন্তু সেটি করতে হবে অবশ্যই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। শান্তি না থাকলে, গণতন্ত্র না থাকলে কোনো ভালো কাজ সম্ভব নয়। এটি আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দলের নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস করেন। আমাদের কর্মীরাও বিশ্বাস করেন।’
তিনি বলেন, ২০০৭-২০০৮ সালে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, সেই সময় নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের কাছে আমরা বিভিন্ন দাবি করেছিলাম। আমাদের দাবি ছিল, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দিতে হবে। এটি কিন্তু আমাদের দলের সভাপতি তিনিই প্রথম দাবি করেছিলেন। আমরা প্রথম থেকে বলে এসেছি, নির্বাচনকে দুটো জিনিস থেকে মুক্ত করতে হবে। পেশিশক্তি ও অর্থ-এই দুটো ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অনেক বাধা-বিপত্তির পর এসব আইন বাস্তবায়িত হয়েছে। আগের দিনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় একটা শব্দ ছিল শোডাউন। মানে আমরা বিপুল সংখ্যক লোক নিয়ে যাব। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য। এই যে ভয়ভীতি প্রদর্শন, এটি কিন্তু ওই মানি এবং মাসল- এই দুটির ব্যবহার থেকে। এখন গত কয়েক বছর ধরে পাঁচজনের বেশি প্রার্থীর সঙ্গে যেতে পারেন না। কাজেই হইচইও নেই, গোলমালও নেই।
এইউএ/এমএআর/এমএস