ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

বিএনপির প্রতি কাদেরের তিন প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:১৫ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিএনপি নেতাদের প্রতি তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর জরুরি সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব প্রশ্ন ছুড়েন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির কাছে আমার প্রথম প্রশ্নটা হচ্ছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডিমনিটির কুখ্যাত অধ্যাদেশ জারি এবং এরপর এই অধ্যাদেশকে ৫ম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ কি? আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর ব্যাখ্যা আমি জানতে চাই। দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবল প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার যে কাজটি তারা করেছেন এর ব্যাখ্যা? তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, তরিঘড়ি করে বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের আটদিন আগে বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে কেন ৭ ধারা বাতিল করে দেয়া হয়েছে, এর ব্যাখ্যা আমরা জানতে চাই।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রথম বিষয়টি সংবিধান সম্মত নয়। আর দ্বিতীয় বিষয়টি আইনি বিষয়। তারা যদি মামলা মোকাবেলা করে আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারে, ওয়েলকাম। সরকার যদি বাধা দিত, সরকার যদি বিচার বিভাগকে কোনো প্রকারে প্রভাবিত করতে চাইতো তাইলে বেগম জিয়া এতগুলো মামলা থেকে জামিন পেত না। প্রায় ৩০টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন, সরকার যদি হস্তক্ষেপ করতো তাহলে কীভাবে এসব মামলা থেকে জামিন পেল।

তিনি বলেন, সেই মামলার জন্যও আপনারা আইনি লিগ্যাল ব্যাটলে যান। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি সরকারের পক্ষ থেকে মামলার ব্যাপারে বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে লিগ্যাল ব্যাটলে কোনো প্রকার বাধা, কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ আমাদের পক্ষ থেকে হবে না।

আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে কাদের বলেন, মওদুদ আহমদের কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়া শিখতে হবে? তিনি এমনও বলেছেন সংবিধানের বাইরে গিয়েও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। তারা যেসব দাবি সংবিধান বাইরে গিয়ে মেনে নেয়ার দাবি করেছেন। যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে, আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসে এটা তাদের পক্ষে বলা সম্ভব। মওদুদ নিজেই আইন লঙ্ঘন করেন, তিনি মৃত ব্যক্তির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট আদালতে জমা দিয়ে ৪০ বছরের দখল করা বাড়িটা রক্ষা করতে পারেননি। যিনি অপচেষ্টার দালাল। তার পক্ষে এ ধরনের দাবি আমরা সেভাবে নিচ্ছি না।

খালেদা জিয়াকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, রাজপথে সরকারে দশ বছর হয়ে গেল, এই দশ বছরে বারে বারে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, সবই সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক ছোট খাটো আন্দোলনের ডাক নয়, বেগম খালেদা জিয়াও সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন এর সঙ্গে বাস্তবতা কতটুকু এটা আপনারা জানেন। দশ বছরে একটা দিনও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোনো আন্দোলন বিএনপি নামক বিরোধী দল করতে পারেনি। আমরা চাপ অনুভব করেছি এমন কোনো আন্দোলন বিএনপি করতে পারেনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত ব্যর্থ অপজিশন, এত ব্যর্থ বিরোধী দল বাংলাদেশে আসেনি। এই ব্যর্থতার জন্য বিএনপির টপ টু বটম সকল নেতার পদত্যাগ করা উচিত।

কাদের বলেন, ফখরুল ইসলাম, মওদুদ আহমদ, মোশাররফ, রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইক দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে আওয়াজ দিলেই কি সরকার হটে যাবে? এই সরকারের গণভীত খুবই শক্তিশালী, এই সরকারের গণভীত বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে প্রথিত। আমাদের শিকড় অনেক গভীরে আমরা হঠাৎ করে এসে জনসমর্থহীনভাবে সরকারে আসিনি। এটা যেন তারা ভুলে না যায়।

জনগণের রায়ের ওপর আস্থা নেই বলে সরকার ইভিএমে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে বিএনপির এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ইভিএম আমাদের নতুন কোনো দাবি নয়। সারা দুনিয়ায় আধুনিক স্বচ্ছ এবং স্বল্প সময়ে ভোট প্রদান গণনা এবং ফলাফল। এটা সর্বশেষ প্রযুক্তি, ভারতে এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে আম আদমির অরবিন্দ কাজরিওয়াল, তিনি বলেছেন এখানে ডেম্পারিংয়ের সুযোগ আছে, অনেক বিতর্ক আলাপ আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে বিএনপির কেন ভয় সেটা আমরা বুঝে ফেলেছি। বিএনপির ভয় হচ্ছে ইভিএমে ভোট হলে বিএনপি আর কেন্দ্র দখলের পুরনো অভিযোগ আনতে পারবে না, ভোট জালিয়াতির কথা বলতে পারবে না। ভোট কারচুপির কথা বলতে পারবে না। বিএনপি আর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার পুরনো অভিযোগ আনতে পারবে না এ কারণেই বিএনপি ইভিএম চায় না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি আমরা নিতে শুরু করেছি। এ মাসেই আমাদের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করব। জোট নিয়েও আমরা পরোক্ষভাবে আলাপ আলোচনা করেছি। যারা আমাদের এত দিনের শরিক তাদের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। অনেকে আসতে চাচ্ছে তাদের সঙ্গেও আমরা কথাবার্তা বলতে শুরু করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের জোটে আলাপ আলোচনা চলছে, এ মাসের শেষ দিকে ফাইনাল সেপ দিবে। বেশিদূর গেলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যেতে পারে। আমাদের জোটের জন্য ৬৫-৭৫ সিট ছেড়ে দেয়ার চিন্তা ভাবনা আছে। এখানেও কথা আছে এটা কোনো বাইন্ডিং বিষয় না। ভালো প্রার্থী হলে আমরা এক্সসেপ্ট করব। উইনেবল প্রার্থীকে আমরা মনোনয়ন দিব। এলায়েন্সের যে কোনো দলেরই হোক আমরা তাদের এক্সসেপ্ট। প্রার্থী উইনেবল হলে আমরা মনোনয়ন দিব।

দেশের সর্বশেষ অবস্থা এবং আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আজকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আলাপ আলোচনা করেছি। জেলা পর্যায়ে তৃণমূলে আমাদের পার্টির অবস্থা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সামনে ট্রেনে করে উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার আমাদের প্ল্যান রয়েছে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

এইউএ/জেএইচ/জেআইএম

আরও পড়ুন