২১ আগস্টের রায় নিয়ে সঙ্কট নয়, ইতিবাচক উদ্যোগ চান ফখরুল
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার গোটা বিষয়টিকে সরকার প্রতিপক্ষ বিএনপিকে দমন ও দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বরং আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানকে দেশের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজনীয় মনে করি। সরকারের উচিত নতুন সংকট সৃষ্টির পরিবর্তে বিদ্যমান সমস্যাদি সমাধানের উদ্দেশ্যে ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়া।
সোমবার (২৭ আগস্ট) সকাল সোয়া ১০টার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘সম্প্রতি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ঘিরে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে আইনমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনদলের দায়িত্বশীল নেতারা যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তা কখনও কাম্য হতে পারে না। কেননা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচার চলাকালেও এমন হয়েছে এবং তার ফলাফল মামলার রায়ে প্রতিফলিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত বিতর্কিত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দের পেশকৃত চার্জশিটে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্যই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। শেখ হাসিনাও ক্রমাগত বলে এসেছেন এই হামলার ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। কিন্তু আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনা কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তা কিংবা আইনজীবীকে কখনও খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমান তাকে হত্যা করতে চেয়েছেন বলেন নাই।’
‘২০০৭ সালে শেখ হাসিনা সাব জেলে বন্দী থাকার সময় এই মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুল কবির তাকে (শেখ হাসিনা) জিজ্ঞাসা করলে ১৬১ ধারায় গৃহীত জবানবন্দিতে তিনি কোথাও খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি কিংবা তাদের সম্পৃক্ততা আছে বলে দাবি করেননি। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মামলার (ভিকটিম) চার্জশিটভুক্ত দুই নম্বর সাক্ষী থাকার পরও তিনি আদালতে আসেননি, সাক্ষ্য দেননি, কোনো কথা বলেননি, সহযোগিতাও করেননি। অথচ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানানো হয়, উদ্যোগ নেয়া হয় কিন্তু শেখ হাসিনা তদন্ত কাজে অসহযোগিতা করেন।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি তখনও নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছে, এখনও জানায়। আমরাও ওই ঘটনার জন্য দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কারণ আমরাও চাই এমন নির্মম অরাজনৈতিক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানোর বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দুরভিসন্ধিমূলক ছাড়া কিছু নয় বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।
‘শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়িতে কয়েকটি বুলেট ছোড়া হয়েছে এবং তা গাড়ির কাঁচ ও চাকায় আঘাত করেছে’-এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করেন বিএনপির এই মহাসচিব। এ সময় তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন তাহলে কোনো তদন্ত প্রতিবেদনে কিংবা স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দিতে গ্রেনেড হামলা ছাড়া গুলি ছোড়ার কোনো কথারই উল্লেখ নেই কেন। তিনি জানতে চান কে বা কারা এসব গুলি ছুড়েছে তা কি এই ঘটনার জন্য প্রাসঙ্গিক নয়?
ফখরুলের অভিযোগ, সরকার বিচার বিভাগকে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরণের অপচেষ্টায় রত হয়েছে। বিচারক নয়, এখন কোন মামলার রায় কী হবে, কবে হবে তা ঠিক করেন আইনমন্ত্রী।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে পড়বে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন তারও সমালোচনায় করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এই কথার অর্থ হলো তিনি (ওবায়দুল কাদের) জানেন যে, কী রায় হতে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বলা এসব বক্তব্যকে কোনো বিচারেই গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার কিংবা আইনের শাসনের পক্ষে বলা যাবে না। একমাত্র স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই শুধু এমন ঘটনা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মিজবাহ প্রমুখ।
কেএইচ/এসআর/জেআইএম