আন্দোলনের চক্রান্ত চলছে, আমরাও প্রস্তুত : কাদের
>> মার খাও কিন্তু উত্তেজিত হওয়া চলবে না : প্রধানমন্ত্রী
>> কোটা আন্দোলনেও ভয়ঙ্কর কিছু হতে পারতো
>> নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিবর্তনের দাবি ‘মামাবাড়ির আবদার’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক সময়ের ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলন এবং পরবর্তীতে সেই আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের দাবি, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অনুপ্রবেশকারী ঢুকিয়ে বিরোধীপক্ষ ফায়দা হাসিলের চক্রান্ত করেছিল। সেই চক্রান্ত এখনও চলমান বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এমন আন্দোলন করার আরও চক্রান্ত চলছে। দেশে-বিদেশে গোপন বৈঠক হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সতর্ক ও প্রস্তুত আছি।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি আয়োজিত ‘গুজব সন্ত্রাস-অপপ্রচার রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সরকার উৎখাতে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র, আগুন-সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, গুজব ও অপপ্রচার নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর সম্প্রতি নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উসকানি দিতে সরকারবিরোধী মহলের অপপ্রচার ও গুজব নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থী নিহতের গুজব ছড়িয়ে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ের পাশের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের নির্দেশনার বিষয়টি তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বারবার অফিস থেকে ফোন করেছিলাম, পার্টি অফিসের গেটে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসছে। ওরা আক্রমণ করবে, আমরা কি করবো? নেত্রী বললেন, মার খাও কিন্তু উত্তেজিত হওয়া চলবে না। নেত্রী যদি ধৈর্য ধরার পরামর্শ না দিতেন, ছাত্রছাত্রীদের ওপর বলপ্রয়োগ করা যাবে না- পুলিশকে যদি এই নির্দেশনা না দিতেন তাহলে কি পুলিশ ধৈর্য ও সংযম দেখাতে পারতো?’
‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যথাযথভাবে পরিস্থিতি মনিটরিং করেছেন এবং মোকাবেলা করেছেন’- যোগ করেন কাদের। বলেন, ‘একটি আন্দোলনকে হিংসাত্মকভাবে ভয়াবহ রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার যে বিপজ্জনক এজেন্ডা সেই এজেন্ডাকে তিনি সৎ সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে একজন স্টেটসম্যান, চিন্তানায়ক ও রাষ্ট্রনায়কের মতো মোকাবেলা করেছেন।
‘আমাদের পার্টি এখন রিঅ্যাকটিভ পার্টি। আমাদের পার্টি এখন প্রোঅ্যাকটিভ পার্টি। আমাদের পার্টি যদি প্রোঅ্যাকটিভ না হতো তাহলে আমরা হেরে যাওয়া চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জিততে পারতাম না।’
সেতুমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘কোটা আন্দোলনের ওপর বিএনপি ও তার সাম্প্রদায়িক দোসররা ভর করেছিল। লন্ডন থেকে নির্দেশনা এসেছিল। ভয়ঙ্কর আরও কিছু হতে পারতো কিন্তু সরকার নাইসলি (চমৎকারভাবে) পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করেছে এবং সেটা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা এখন প্রস্তুত। আমরা জানি, আরও এমন আন্দোলনের চক্রান্ত আছে। গোপনে গোপনে বৈঠক হচ্ছে, দেশে হচ্ছে বিদেশেও হচ্ছে।’
‘এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সতর্ক ও প্রস্তুত আছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের অফিস সক্রিয় থাকে। প্রতিদিন আমরা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করি। কোনো বিষয়ে আমাদের যদি ঘাটতি থাকে নেত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেই এবং এগিয়ে যাই।’
নির্বাচনের প্রক্রিয়া পরিবর্তনের দাবি ‘মামাবাড়ির আবদার’
গতকাল এক অনুষ্ঠানে বর্তমান নির্বাচনের প্রক্রিয়া পরিবর্তনের দাবি জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। বলেন, বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে আসলে তারা নির্বাচনে আসবে।
বিএনপি ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া একটি সাংবিধানিক বিধান। নির্বাচনের আগে এ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। তাদের (বিএনপি) নেতাদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া বদলানোর দাবি মামাবাড়ির আবদার।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য সচিব হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে এটি পরিচালনা করেন দলের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। আরও বক্তব্য রাখেন একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোজাম্মেল বাবু, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জাফরিন আহমেদ রূপন্তী, সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মানরাজ হোসেন শামীম, সিটি কলেজের সহকারী শিক্ষক আহসান হাসীব রাজা, অভিনেত্রী অরুনা বিশ্বাস প্রমুখ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
এইউএ/এমএআর/এমএস