মহাদুর্নীতি সুপারদুর্নীতি মেগাদুর্নীতির জয়জয়কার : রিজভী
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের মুখে উন্নয়নের জোয়ার আর কাজে দুর্নীতির পাহাড়। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে এত বিশাল পরিমাণ কয়লা লুটপাটের পর দুদক তদন্ত শুরু করেছে- ‘যেন রোগী মরিবার পর ডাক্তার আসিলেন’। আসলে দুদক তো সরকারের দুর্নীতি ধোয়ার মেশিন। আর বিরোধীদলের জন্য দুদক টর্চারিং মেশিন। দুদকের তদন্ত আইওয়াশ মাত্র। আসলে এই অবৈধ সরকারের আমলে মহাদুর্নীতি, সুপারদুর্নীতি, মেগাদুর্নীতিরই জয়জয়কার। ’
শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘শেয়ার মার্কেট থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু হয়ে ব্যাংক-বীমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পরীক্ষা ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষায় হাইপারদুর্নীতি মহা ধুমধামেই চলছে এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। তথ্যমন্ত্রী তথ্য দিয়েছেন যে, পিয়নের চাকরি নিতে গেলেই নাকি ১০ লাখ টাকা লাগে। এই ১০ লাখ টাকার ভাগ কে কে পায়, সেটিও তথ্যমন্ত্রী জানালে ভালো করতেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে লোপাট হয়ে গেল লক্ষ লক্ষ টন কয়লা। অথচ খনি কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। কারণ, খনি কর্তৃপক্ষই ‘শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল’। আবার বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির বিপুল পরিমাণ কয়লা লোপাট হওয়া বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীন থাকাটা রহস্যজনক। খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ থাকার ঘোষণা, কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে আসা, গত বছর জুলাইয়ে বিদ্যুৎ কেন্দের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গত রোববার (২২ জুলাই) থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার পরও মন্ত্রণালয়ের হুঁস হলো না কেন, তাতেই প্রমাণিত হয় ক্ষমতাসীন মহলের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া লক্ষ লক্ষ টন কয়লা অদৃশ্য হয়ে যায়নি।’
দেশব্যাপী চলমান সরকারের মাদকবিরোধী অভিযানের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আইন হাতে নিয়ে বেআইনিপন্থায় চালানো হচ্ছে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান। এই অভিযান জনমনে আতঙ্কের হিম শীতল স্রোত বইয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিনই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে চলছে মানুষ হত্যার উৎসব। মাদক অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রায় আড়াইশো ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের বাহিনীগুলো গর্বের সঙ্গে মাদকবিরোধী অভিযানের কথা বলছেন জোরেশোরে। কৃতিত্ব দাবি করছেন মাদক নির্মূলের, কিন্তু জনসমাজে মাদকের ব্যাপ্তি কতটুক হ্রাস পেয়েছে, তা সবাই টের পাচ্ছে। বেআইনি কর্মকাণ্ড বেআইনিপন্থায় দমন করা যায় না, প্রয়োজন হয় ন্যায়ভিত্তিক আইনের শাসনের প্রয়োগ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ক্ষমতাসীনদের অনুগ্রহভাজন হয়ে ক্ষমতাসীন দলের অন্যায্য-অন্যায় নির্দেশ পালন করছে। এই কারণে তারা বাংলাদেশে এত রক্ত ঝরিয়েও মাদকের বিস্তার রোধ করতে পারেনি। লোক দেখানো অভিযানে মাদকের শেকড় উপড়ে ফেলা যায় না। যার কারণে ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।’
ক্রসফায়ারের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের দাবি না মেনে আগামী জাতীয় নির্বাচন একতরফা করতে দেশকে ভোটার শুন্য করার জন্যই সরকার ক্রসফায়ারকে নিজেদের টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন বলে মনে করছে। আমরা বারবার বলেছি, দেশজুড়ে ক্রসফায়ারের হিড়িক মূলত দেশের জনগোষ্ঠীকেই আতঙ্কিত করা। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের মনে ভয় ঢোকানোর জন্য এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযানে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে।’
এ সময় ক্রসফায়ারকে দুরভিসন্ধিমূলক, মনুষ্যত্বহীন ও অমানবিক আখ্যায়িত করে এ কর্মসূচি বন্ধ করার জোর আহ্বান জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এসআর/এমএস