খালেদাকে কারাগারে রেখে নির্বাচন হবে না : ফখরুল
অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উনাকে (খালেদা) কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।
সোমবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে প্রতীকী অনশন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। এতে তাদের রাজনৈতিক জোট এবং সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বুদ্ধিজীবীরা অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
দিনব্যাপী এই প্রতীকী অনশনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজপথে আন্দোলন করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। ’
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোন নির্বাচন হবে না। অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়, দেশের ষোল কোটি মানুষের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্রতকে পুনরুদ্ধার করার আহ্বান জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, এ জন্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দেশের সব রাজনৈতিক দল ও মত এবং ব্যক্তিকে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। আজকের এই অনশন কর্মসূচি থেকে সেই আহ্বান রাখছি। আসুন রাজপথে আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি দেশের জনগণকে মুক্ত করি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করি।
অনশনে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এই দেশে নির্বাচন হবে না, নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। এদেশে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন খালেদা জিয়া।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি আর হতে দেয়া হবে না। আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয় নাই। তাকে রাজনৈতিকভাবে কারাগারে নেয়া হয়েছে। তাই রাজপথে আন্দোলন করে তাকে মুক্ত করতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেখানে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে। নিম্ন আদালতে সরকারের নির্দেশে এবং রাজনৈতিক প্রভাবে জামিন আবেদন স্থগিত হয়েছে। আমরা হাইকোর্টে গিয়েছিলাম নিষ্পত্তি করতে হবে কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট দেরি করে দিলো। এতেই প্রমাণিত হয় বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘যদি আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয় তাহলে একমাত্র উপায় হচ্ছে রাজপথ। আপনার রাজি আছেন তো? প্রস্তুতি নেন, কর্মসূচি দেয়া হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায় করতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা জয়যুক্ত হবো।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মতো আমরাও বৃহত্তর কারাগারে আছি। বাংলাদেশ একটা বৃহৎ কারাগার। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে শাহবাগে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে। কাজ বাস্তবায়ন করতে পারলেই এই সরকারের পতন হবে এবং গণতন্ত্রের বিজয় হবে।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্বাস করি খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন নয়, তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না আমরা যদি বিশ্বাস করি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবেনা তাহলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা যে যা বলি সেগুলো যদি পালন করি তাহলে অবশ্যই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে এবং এদেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। ’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এদেশে বারবার গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ ও তার দোসর জাতীয় পার্টি। জনগণের জন্য জনগণের কল্যাণের জন্য খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে তার নেতৃত্বে আমরা নির্বাচনে যাব। তাকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেব।’
সকাল নয়টায় শুরু হওয়া বিএনপির পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত । গণস্বাস্থ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পানি পান করানোর মাধ্যমে প্রতীকী অনশনের সমাপ্তি টানেন।
অনশনে সংহতি জানাতে আসেন ২০ দলীয় জোটের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতারা। এছাড়াও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের যৌথ সঞ্চালনায় অনশনে অন্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, বেগম সেলিমা রহমান, নিতাই রায় চৌধুরী সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাক কাজী আবুল বাসারসহ অন্যান্য অঙ্গসহযোগী সংগঠন সমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/জেএইচ/পিআর