কোটা সংস্কারে আবারও মাঠে নামাকে রাজনীতি মনে করছে আ.লীগ
কোটা সংস্কারের নামে যে আন্দোলন, সেটির পেছনে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র দেখছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, 'বিএনপি জামায়াত এর ওপর ভর করে সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাই প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেয়ার পরও শিক্ষাঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। সরকারের কাগজপত্র-সংক্রান্ত বিলম্বের সুযোগ নিয়ে নতুন করে মাঠে নামার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে।'
যদিও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ইস্যু করে সরকারবিরোধী শক্তিগুলো রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে- এই অভিযোগ শুরু থেকেই করে আসছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, কোটা সংস্কার নিয়ে সরকার কাজ করছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখভাল করছে। কোটা সংস্কার করে শুধু প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু করার কথাও ভাবছে সরকার। বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের চাকরি দেয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনাও চলছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত ঘোষণাও আসবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ৩৫ ও অবসরের বয়স ৬৫ বছর করা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
দলটির নেতারা অভিযোগ করেছেন, কোটা সংস্কারের নামে আন্দোলন করতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন শক্তি আর্থিক যোগানের পাশাপাশি রাজনৈতিক ইন্ধনও জুগিয়েছে। আন্দোলনে ঘি ঢালার জন্য বিএনপি-জামায়াতের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারির বিলম্বকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনের নামে মাঠে নামার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত।
এই আন্দোলনের পেছনের আসল উদ্দেশ্য জনগণের সামনে পরিষ্কার করতেই সরকার একটু কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বলেও দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত এ আন্দোলনের পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছে। কোটার জন্য এদের আন্দোলন নয়, সরকারকে অস্থিতিশীল করা, বেকায়দায় ফেলতেই এই আন্দোলন।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনের পেছনে জামায়াত-শিবির। এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলেছেন, সেভাবে হবে। এটা নিয়ে আন্দোলনের কিছু নেই। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা হয়েছিল তখনই বোঝা গিয়েছিল সরকারকে বিপদে ফেলা এবং অস্থিতিশীল করাই এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য। সেটা করার এখন আর কোনো সুযোগ নেই। কারণ, সাধারণ শিক্ষার্থীরাই বুঝতে পেরেছে এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে, তাই তারাই আন্দোলনকারী নামধারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা ছিল বিএনপির। সেই চেষ্টা সফল না হওয়ার পর তারা (বিএনপি) কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করে দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সুতরাং এতদিন পর হঠাৎ করে কোটা আন্দোলনকারীরা সবর হওয়ার পেছনে রাজনীতি আছে।
তিনি বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আন্দোলনকারীদের বক্তব্য দেখে বুঝা যায় এরা কোন ঘরানার মানুষ। এরা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী।'
দলটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারি কাজে একটু দেরি হতে পারে। মেনে নেয়ার পরও যদি শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তার পেছনে অন্য কিছু থাকার সন্দেহ আসতেই পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়ে ভাবতে পারে।
এইউএ/জেডএ/আরআইপি