‘খালেদাকে কখন হাসপাতালে নেয়া হবে জানেন আইজি প্রিজন’
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিতে কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি-প্রিজন) নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি জানান, বেগম জিয়াকে কখন হাসপাতালে নেয়া হবে তা আইজি প্রিজনই বলতে পারবেন।
কারাবন্দি খালেদা জিয়া মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে হঠাৎ করেই অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন। কারা ডাক্তার ও সিভিল সার্জন পরীক্ষা করে জানানোর পর আইজি প্রিজন তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন এবং আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তার (খালেদা জিয়া) যে ব্যক্তিগত চিকিৎসক তাদের তিনি (আইজি প্রিজন) কারাগারে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারা সবাই মিলে চেক করে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেন।’
‘তাদের কাছেও বেগম খালেদা জিয়া জানিয়েছেন তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে তারা রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা রিকোয়েস্ট করে গিয়েছেন। আমরা সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলোর করার ব্যবস্থা করছি। আইজি প্রিজনকে জানিয়ে দিয়েছি যত দ্রুততার সঙ্গে এই ব্যবস্থা নেয়া হয় তা করার জন্য।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘যেখানে সবচেয়ে ভালো অবস্থা আছে, যেমন আমাদের বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল, তারপর যেখানে যেটা হয় তাকে যেন সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করা হয় তা বলেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে এবং দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকরাও সেখানে রয়েছেন। সেখানকার চিকিৎসকরা যদি মনে করেন অন্য কোথাও নিতে হবে আমরা সেখানেই নেব।’
আজকেই বিএসএমএমইউতে নেয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আইজি প্রিজন নির্ধারণ করবেন। আইজি প্রিজন কখন নেবেন, কীভাবে নেবেন। ওখানে নিতে তো অ্যারেজমেন্টের ব্যাপার আছে। আমরা তো তাকে দুপুর বেলায় বলেছি। এখন কত তাড়াতাড়ি নিতে পারে এটা তার ব্যাপার।’
এখন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি কেমন- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘খুব ভালো আছেন। আইজি প্রজন জানিয়েছেন, তার ব্লাড প্রেসার ঠিক রয়েছে। চলাফেরায়ও এখন পর্যন্ত কোনো অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়নি।’
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সরকার শতভাগ আন্তরিক কী-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আন্তরিক না হওয়ার তো কিছু নেই। তার টেক কেয়ার করার দায়িত্ব তো আমাদের প্রিজনের, সেটা আমরা করছি।’
আরও পড়ুন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেই পরিষ্কার অবহেলা : রিজভী
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা ইউনাইটেড হাসপাতালে নিতে চাচ্ছেন সরকার কেন চাচ্ছে না- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কারাবিধি অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা যেটা উনি (খালেদা) প্রাপ্য সব আমরা করেছি। ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা বলা হচ্ছে, সেখানকার যিনি চিকিৎসক তাদের আমরা নিয়ে যাচ্ছি (খালেদা জিয়ার কাছে)। তারা যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন সেটাই করা হচ্ছে। ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা তারা বারবার বলছেন, এর তো কোন কারণ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তারা বলছেন তার (খালেদা জিয়া) হাঁটুতে মেটাল রয়েছে সেজন্য ইউনাইটেডের এমআরআই উপযুক্ত। বঙ্গবন্ধুতে আধুনিক যন্ত্রপাতি এমআরআই রয়েছে, সেখানে যদি উপযুক্ততা না থাকে তবে আমরা অবশ্যই সেখানে (ইউনাইটেড হাসপাতাল) নিয়ে যাব। আমরা বঙ্গবন্ধুতে চেক করব। তারা যদি সাপোর্ট দিতে না পারে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। ওইদিনই তাকে কারাগারে নেয়া হয়।
এ মামলায় অন্য আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ের পর খালেদা জিয়াকে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। বর্তমানে সেখানেই বন্দী রয়েছেন তিনি।
বিএনপি নেতারা বলে আসছেন কারাগারে ভালো নেই তাদের দলনেতা। তবে আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই তা অস্বীকার করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সর্বশেষ শনিবার কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে কারা ফটকের সামনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়া ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ করেছিলেন বলে ধারণা তার।
আরএমএম/এনএফ/জেআইএম