ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

নাম বিকৃত করা সমীচীন হয়নি : বি. চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৩৬ পিএম, ০১ জুন ২০১৮

ভারত থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নাম বিকৃত করে বলেছেন বলে দাবি সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের এই চেয়ারম্যানের।

এ জন্য তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘প্রথম কথা আমার নাম বদরুদ্দোজা, এই নামটি আমাদের প্রিয় রসুলের একটি সুন্দর পদবি। এর অর্থ হলো- ঘোর অন্ধকারে উজ্জ্বল পূর্ণচন্দ্র। এই পবিত্র নামটি আমার স্নেহময় নানা রেখেছিলেন। এই নামটিকে বিকৃত করে (অমুক কাকা) বলা প্রধানমন্ত্রীর সমীচীন হয় নাই। পবিত্র কোরানুল করিমে নাম বিকৃতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা স্মরণে রাখলে কৃতজ্ঞ থাকবো।’

শুক্রবার রাজধানীর হোটেল মেট্রোপলিটানে বিকল্প স্বেচ্ছাসেবকধারা আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।

ভারত সফর নিয়ে গত বুধবার (৩০ মে) গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ‘বদু কাকা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন।

বি. চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। এ বিষয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ‘শুধু আওয়ামী লীগের দাবিকৃত (পরবর্তী সময়ে আমার সমর্থিত) তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করার প্রয়োজনে তাড়াহুড়ার মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন না হলে দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতো। ওই সময়ে আমার দল বিএনপি নির্বাচনকে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য ব্যবহার করে নাই। ওই বিল পাস করার পরেই ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।’

এ প্রসঙ্গে বি. চৌধুরী আরও বলেন, অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল অসম্পূর্ণ, প্রশ্নবিদ্ধ। যে নির্বাচন বিনাভোটে সবাই সংসদ সদস্য হয়েছেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করেই বর্তমান সরকার ৫ বছর কাটিয়ে দিচ্ছে। ৪ বছর হয়ে গেল কিন্তু আপনারা ক্ষমতা ছাড়লেন না।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ভারতকে কী কী দিয়েছেন তা জনগণকে জানানো উচিত ছিল। ভারত আমাদের ভালো বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে। তাই তাদের সহযোগিতা ভোলার নয়। তিনি কবিগুরুর একটি কবিতার পঙ্ক্তি উল্লেখ করে বলেন, ‘যতটুকু দিবে ততটকু নিবে’, কিন্তু আমরা কী পেলাম? তিস্তার পানি নাই, পদ্মার পানি শূন্য।

সংসদে একটা জামাই আদরের দল আছে, তাদের কাজ শুধু তেল মারা

এরশাদের নাম উল্লেখ না করে বি. চৌধুরী বলেন, সংসদে একটা জামাই আদরের দল আছে। তাদের কাজ শুধু তেল মারা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতকে মাসে ৫ লাখ টাকা বেতন দেয়া হয়। কিন্তু তার কাজ কী? কী করেন তিনি?

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, কাউকে তেল মারা বা খুশি করার জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করি নাই। তার ব্যাপারে আইনের শাসন লঙ্ঘিত হয়েছে। আদালতের আদেশ সত্ত্বেও তাকে মুক্তি দেয়া হয় নাই।

এরশাদের আমলে শুরু হয় মাদক ব্যবসা

মাদক ব্যবসা এরশাদের আমলে শুরু হয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসার নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইনে মাদক ব্যবসায়ীদের বিচার করতে হবে।

বি. চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য যুক্তফ্রন্ট জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করবে। যুক্তফ্রন্ট বিন্দুতে নেই, কিন্তু এই ফ্রন্ট দেশের মানুষের মনে ঝড় তুলেছে।

তিনি বলেন, যুক্তফ্রন্ট সৎ নেতৃত্বের তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির মঞ্চ হিসেবে ইতোমধ্যে জনগণের মনে ঝড় তুলেছে। জনগণের এই মঞ্চ দিনদিন শক্তিশালী হচ্ছে, যা অন্য দুটি (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) রাজনৈতিক শক্তিকে ভারসাম্যের মধ্যে রাখতে পারবে।

‘গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনও আমাদের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। জনগণ ভোট দিলে যুক্তফ্রন্ট জাতীয় নির্বাচনের পর ৫ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করবে’,- বলেন তিনি।

যুক্তফ্রন্টর দাবির পুনরুল্লেখ করে বি. চৌধুরী বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন না হলে আগামী সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের ১০০ দিন আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। যাতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা তাদের পদমর্যাদার সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে না পারেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ডা. বি. চৌধুরী যখন শিক্ষক আমি তখন ছাত্র, ওনার মতো একজন দেশবরেণ্য ব্যক্তির নাম বিকৃতভাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ করেছেন।

তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নেয়ার জন্য ডা. বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের প্রতি আহ্বান জানান।

বিকল্প স্বেচ্ছাসেবকধারার সভাপতি বিএম নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রউফ মান্নান, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, শাহ আহম্মেদ বাদল, আবুল বাশার, গণ-সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি এস আই মামুন প্রমুখ।

এইউএ/জেডএ/এমএস

আরও পড়ুন