বিএনপি আজকে আওয়ামী লীগের বাক্সবন্দি : মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘জনগণকে ভোটের বাইরে রেখে সরকার আবার ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির মতো পাতানো খেলা খেলতে চায়। তাই বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আজকে আওয়ামী লীগের বাক্সবন্দি, গণতন্ত্র আজকে আওয়ামী লীগের বাক্সবন্দি। শুধু খালেদা জিয়া কারাগারে নয়, সারা বাংলাদেশ আজ কারাগারে। আজকে গণতন্ত্র কারাগারে। তাই জিয়াউর রহমানের আদর্শের সদস্য হিসেবে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৭তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস এতে সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যদের মধ্যে হেলেন জেরিন খান, রাজিয়া হালিম, নিলুফা ইয়াসমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটা অন্ধকার টানেলের মধ্যে আছে। আজকে এ দেশের বিচারব্যবস্থা সরকারের কথায় চলে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, মিডিয়া সবকিছু প্রকাশ করতে পারে না, আমরা ছোটোখাটো সভা করতে পারি না। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেই, তারা তাতে ভীত হয়ে আমাদের বাধা দেয়। কালোপতাকার দিনে মহিলা দলের নেত্রীরা বেশি ভুক্তভুগী ছিল, সেইদিন কী ছিল, এর চেয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হতে পারে না। সেই দিন ৫৪/৫৮জন কারাবরণ করেন। তারা (সরকার) আমাদের সভা করতে দেয় না, আবার বলে আমাদের আন্দোলন করার সামর্থ্য নেই।’
দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন করছি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। যদি সফল না হতো আমাদের যদি ভয় না পেতেন, তাহলে এখনও কেন, ছলেবলে কলেকৌশলে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আপনারা তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে রাখছেন। যদি মনে করতেন বিএনিপর সামর্থ্য নেই, বিএনপি শেষ হয়ে গেছে, তাহলে তো বেগম জিয়াকে ভয় পাওয়ার কথা না।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন,‘ দেশনেত্রীর অংশগ্রহণ ছাড়া জনগণ এদেশে নির্বাচন হতে দেবে না। তাই আমাদের সবার দায়িত্ব হবে এই আন্দোলনে শরিক হওয়া। মহিলা দলের নেতৃবৃন্দকে আমি অভিনন্দন জানাই। আপনারা আমাদের অনেক সাহস যুগিয়েছেন। আপনারা আন্দোলন থেকে পিছিয়ে যান নাই। আপনারা ঘর সামলান, সংসার সামলান, সবকিছু সামলান, ইনশাআল্লাহ আপনারা রাজনীতিও সামলাবেন সেই বিশ্বাসও আমাদের আছে। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী একটা প্রেসব্রিফিং করেছেন। ভারত থেকে এসেছেন, তিনি তা না বলে, বেগম খালেদা জিয়ার নামে যত মিথ্যা কথা, বানোয়াট কথা বলেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) নাকি ২০০১ সালে ভারতকে গ্যাস দেবে বলে ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেননা ১৯৯১ সাল থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজসম্পদমন্ত্রী ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি এমন ব্যবস্থা করেছিলাম যে, ভারত যে দাবি করেছিল সেই দাবিটুকুও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গ্যাসের দাবি আর তাদের ছিল না। তাই ২০০১ এ গ্যাসের দাবির প্রশ্নই ওঠে না। আজকে দেশনেত্রীর (খালেদা জিয়া) নামে কুৎসা রটানোর জন্য, তার ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য এসব কথা বলছেন। এমনকি রিজভীকে এক বালতি পানি দেবার কথাও বলেছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী এটা বলতে পারেন?’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সেদিন একটা মিটিংয়ে আমি বলেছি যে প্রধানমন্ত্রী যদি তার এ বক্তৃতা পুনরায় শোনেন তারই লজ্জা লাগবে। আমরাও লজ্জিত হয়েছি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, ভারত এমন দিয়েছে সারাজীবন তারা মনে রাখবে। আপনি নাকি কিছু চান নাই, চাইতে যানও নাই। তাহলে বাংলাদেশের বাঁচামরার সম্পর্ক হলো পানি, পানির সমস্যা হলো ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রধান সমস্যা। উনি যদি চাইতে না যান, তাহলে দয়া করে সরে যান।
তিনি বলেন, ‘তাই আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কথা থেকেই আপনাকে বলতে চাই, আপনি যদি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করতে না পারেন, জনগণের পক্ষে কথা বলতে না পারেন, তাহলে জনগণের দাবি পূরণের জন্য এই দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। তাই আগামী দিনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের বিকল্প নেই।’
কেএইচ/জেডএ/এমএস