সরকার উন্নয়ন প্রতিবন্ধী : রিজভী
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন প্রতিবন্ধী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।
রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইফতার, সেহেরি ও তারারির নামাজের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার সরকারি ঘোষণা জনগণের সঙ্গে খাঁটি প্রহসন। প্রধানমন্ত্রীর মুখে তুবড়ি ছোটানো উন্নয়নের সড়ক-মহাসড়কের খানাখন্দে লুটোপুটি খাচ্ছে। আওয়ামী সরকার উন্নয়ন প্রতিবন্ধী। এখন এদেশে প্রকৃত উন্নয়ন দুরে থাকা মানুষের নূন্যতম নাগরিক সেবাটুকুও ধ্বংস হয়ে গেছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, এই পবিত্র মাহে রমজানেও দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি চলছে গ্যাস ও পানির তীব্র সঙ্কট। গ্যাস সঙ্কটে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চুলা জ্বলছে না, ফলে সেহেরি ও ইফতারি তৈরি করতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পানি সঙ্কট। আর এ কারণে মানুষ রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ওজু কিংবা গোসলের পানিও পাচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে, হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। গ্রামে গ্রামে চলছে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মধ্যে আসে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, ‘বিএনপি আসুক না আসুক, যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, কে আসলো, আর না আসলো তাতে কিছু আসে যায় না, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো বিএনপি নির্বাচনে না আসলে আমাদের কিছু করার নেই। তাছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক কি?’ আমি বলতে চাই- বিশাল সম্পর্ক আছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা গভীর ষড়যন্ত্র। তার এই বক্তব্য জবরদস্তিমূলক একতরফা নির্বাচনেরই ইঙ্গিতবহ।
রিজভী আহমেদ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে কয়টি আসনে দাঁড়িয়েছেন তিনি কখনোই সেই নির্বাচনে পরাজিত হননি। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন। সেজন্য বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তায় প্রধানমন্ত্রীর এত অসূয়া, এত বিদ্বেষ। আর এজন্যই বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে সরাতে এত ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের উদ্দেশে বলতে চাই- বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মানেই জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক, বেগম খালেদা জিয়া মানেই বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া মানেই গণতন্ত্র। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের সাথে কখনও প্রতারণা করেননি। জনগণের প্রতি যখন যে ওয়াদা করেছেন সেটি পালন করেছেন। প্রদত্ত অঙ্গীকারের কখনও বরখেলাপ করেননি। কিন্তু স্বৈরাচারের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পাওয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পদে পদে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।
রিজভী বলেন, আপনি (ওবায়দুল কাদের) কী ভুলে গেছেন ৮৬ এর নির্বাচনের কথা, ১০ টাকা কেজি চালের কথা, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা? আমরা কাউকে মাইনাস করতে চাই না, কিন্তু যারা অন্যকে মাইনাস করতে চায় তারা প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই মাইনাস হয়ে যায়। সুতরাং, আইন-আদালতসহ সবকিছু কব্জা করে বেগম খালেদা জিয়াকে জোর করে সাজা দিয়ে আপনাদের ক্ষমতার ঝাড়বাতির রোশনাই আর বেশি দিন থাকবে না। এবারে আপনাদের পতনের বিষণ্ন রাগিনী বাজতে শুরু করেছে। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গতকাল (শনিবার) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- ঈদের আগেই সারাদেশের সড়ক সংস্কার করা হবে। মূলত ঈদের আগে ক্ষমতাসীন লোকজনের পকেট ভারী করতেই এই সংস্কার প্রকল্প।
তিনি বলেন, যারা সারা বছর মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে রাখে তারা কোন আরব্য রজনীর দৈত্যকে দিয়ে ঈদের কয়েকদিন আগে সব রাস্তাঘাট মেরামত করে ফেলবেন সেটি কারো উপলব্ধিতে আসে না। এটি মন্ত্রীর বকোয়াস ছাড়া কিছুই নয়।
সারাদেশে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যাযজ্ঞ চলছে উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ বলেন, গত তিন দিনে চার জেলায় বিচার বহির্ভূত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৭ জন। এই মাসে যেনো পোকামাকড়ের মতো বিচার-বহির্ভূত মানুষ হত্যার হিড়িক চলছে। গত রাতেও বরিশালে সাদা পোশাকের পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের নামে দুজন নিহত হয়েছে।
অবিলম্বে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার-বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা বন্ধের দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের আমলে সংঘটিত সকল বিচার বহির্ভূত হত্যার তদন্ত চেয়েছেন বিএনপির এই নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মো. মুনির হোসেন, আসাদুল করিম শাহীন, শামসুজ্জামান সুরুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এমবিআর/জেআইএম