‘ক্ষমতাসীনদের সিন্ডিকেটে খাদ্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যাচ্ছে’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায় নিজের কৃতিত্বের কথা বর্ণনা করতে অক্লান্ত থাকেন। তার কৃতিত্বের মধ্যে অন্যতম হলো এই পবিত্র রমজানে দেশব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষকে দিশেহারা করা। বাজার নিয়ন্ত্রণে ১২টি সংস্থাকে নাকি সরকার নিয়োগ দিয়েছে! কিন্তু ক্ষমতাসীন সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে উক্ত ১২টি সংস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে।
শনিবার দুপরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির এই মুখপাত্র।
তিনি বলেন, ‘রমজান মাসে প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যন্ত বেশি। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। জ্বালানী সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্যাস অধিকাংশ সময়ই থাকে না, যদিও কখনও আসে তাতে আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলে-এতে রান্না দুরে থাক, পানিও গরম হয় না। ঢাকা শহরের প্রান্তিক এলাকাগুলোতে গ্যাস থাকেই না।’
রিজভী বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় কারান্তরীণ অবস্থায় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বিরুদ্ধে একের পর এক গায়েবি, অসত্য ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। কেবলমাত্র বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা এবং সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের পুত্র হওয়ার কারণেই তার ওপর এত জুলুম, নির্যাতন।
বর্তমান সরকারকে ভোটারবিহীন সরকার আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির তরুণ ও বলিষ্ঠ নেতা শুধুমাত্র অনিন্দ্য ইসলাম অমিতই নয়; বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য তরুণ ও সাহসী নেতাকে সুপরিকল্পিতভাবে ঘায়েল করতে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার অত্যাচার নির্যাতনের অমানবিক ও নির্দয় পন্থা অবলম্বন করেছে।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর এ ধরনের ন্যাক্কাজনক নিষ্ঠুর আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল বানোয়াট ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।’
রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে জাল নথি তৈরির মাধ্যমে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাজা দেয়ার পর সেই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর এখনও তাকে মুক্তি দিচ্ছে না সরকার। বরং নতুন নতুন জামিনযোগ্য মামলায় তাকে আটকানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। তিনি যেসব মামলায় অতীতে জামিনে ছিলেন সেসব মামলায়ও তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।’
রমজানেও খালেদার উপর সর্বোচ্চ জুলুম
খালেদার অসুস্থতার প্রসঙ্গটি টেনে এনে রিজভী বলেন, ‘কারাগারে দেশনেত্রী গুরুতর অসুস্থ, দিন দিন শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি হাত ও পায়ের ব্যথায় প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছেন। ব্যথার যন্ত্রণায় হাঁটতে পারছেন না, ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়ার পরও কীভাবে একজন বয়স্ক জনপ্রিয় নেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে কষ্ট দেয়া হচ্ছে, দেশবাসী তা প্রত্যক্ষ করছে। পবিত্র মাহে রমজানেও তার (খালেদা জিয়া) ওপর সর্বোচ্চ জুলুম চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচনী ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী সরকারই নানা ফন্দি-ফিকির করছে কীভাবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনের নির্বাচন করা যায়।
বিএনপি আগামী নির্বাচন থেকে আস্তে আস্তে দুরে সরে যাচ্ছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব, বিএনপি দূরে সরে যাচ্ছে না বরং আপনারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন, ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি করার জন্য।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে মাইনাস করে, বিএনপিকে মাইনাস করে আপনারা নির্বাচন করবেন-সেই প্রহসন আর এদেশে হতে দেয়া হবে না। এদেশে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা চুক্তিসহ নানা গোপন চুক্তির মাধ্যমে যে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশ বিক্রি করে দিতে পারেন, তার কাছে গণতন্ত্রই বা কী আর অবাধ নির্বাচনই বা কী-কোনটিরই কোনো দাম নেই।’
রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতার আমলকি করতলে ধরে রাখার জন্য তারা এহেন অনাচার নেই, যেটি তারা করছেন না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন, নিপীড়নসহ হত্যা ও গুমের রক্তাক্ত পথেও তারা সমানভাবে অগ্রগামী। ক্ষমতার সোনার হরিনের পেছনে ছুটতে প্রধানমন্ত্রীর কোনো ক্লান্তি নেই। যিনি জনসমর্থন ছাড়া ক্ষমতাকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখেন তার কাছে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন কোনো অর্থই বহন করে না।
প্রধানমন্ত্রীর দলীয় পদ ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘এটা শুধু হাস্যকরই নয়, এটি বছরের সেরা প্রহসন।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক করতে এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জনগণ। আমি আবারও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, দেশি-বিদেশি চক্রান্ত কাজ হবে না। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করা হবে। বেগম খালেদা জিয়াকেও মুক্ত করা হবে। বেগম খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচন এদেশে হবে না, হতে দেয়া হবে না।’
বিশ্বনন্দিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আন্দোলন সহিংস হবে নাকি অহিংস হবে-তা নির্ভর করে সরকারের নীতির ওপর।’
খুলনা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলেও গণতন্ত্র হেরেছে উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশা করব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্বাবাসীর কাছে এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, এই নির্বাচন কমিশনের দ্বারা সুষ্ঠু ভোট আয়োজন সম্ভব নয়। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে খায়রুল কবীর খোকন, আবুল খায়ের ভূইয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মুনির হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এসআর/এমএস