ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

কূটনীতিকদের কাছে বিএনপির উদ্বেগ প্রকাশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:২৬ পিএম, ১৩ মে ২০১৮

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। রোববার বিকেলে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠক করে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

বিকেল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষই কিছু জানায়নি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মৌখিকভাবে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরলেও এ সংক্রান্ত লিখিত কপিও কূটনীতিকদের দেয়া হয়। দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা, কারাবাস, অসুস্থতা, চিকিৎসা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রভৃতি বিষয়ে বিএনপি নেতারা বিদেশি কূটনীতিকদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন।

বিএনপির দাবি, খালেদা জিয়া, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটকে অগ্রাহ্য করে সরকার আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন একতরফাভাবে করার জোর প্রচেষ্টা করছে।

খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানির দীর্ঘসূত্রতার কথা উল্লেখ করে বিএনপির পক্ষ থেকে এজন্য সরকারকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার মাধ্যমে কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার রাজনীতি থেকে চিরতরে নির্বাসিত করতে চায়।

আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক দশক ধরে তিনটি এজেন্ডা বাস্তবায়নের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

প্রথমত, ১৯৭৫ সালে তার পিতা যেমন একদলীয় বাকশাল গঠন করেছিলো তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চান। দ্বিতীয়ত, যে কোনো বিরোধী পক্ষকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে তারা জামায়াতে ইসলামীকে সহিংস চরমপন্থী আখ্যা দিয়ে উৎখাত করেছে। এমনকি মৌলবাদীদের সহযোগী অভিযোগ করে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তৃতীয়ত, সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়, দিন দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসকরা তার প্যারালাইসিস, অন্ধত্ব ও সব ধরনের কাজ করার সার্মথ্য হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি রয়েছে বলে মত দিয়েছেন। তিনি হাঁটতে পারছেন না। চোখের কর্ণিয়া শুকিয়ে যাচ্ছে যার ফলে তিনি চিরতরে অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। এত অসুস্থতার কথা জানিয়ে বার বার বলার পরেও সরকার তার সুচিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালের ব্যবস্থা করেনি।

শুধু তাই নয় গত ৮ মে আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এসব অসুখ নিয়েও তিনি এতদিন রাজনীতিতে সচল ছিলেন তাই স্বাস্থ্যগত কারণে তাকে বেইল দেয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার বেইল হেয়ারিং নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি তার মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের কোনো প্রতিক্রিয়া কানে তুলছে না সরকার।

কূটনীতিকদের আরও বলা হয়, নির্বাচনের পরিবেশ তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এমন টের পেলেই সেই নির্বাচন স্থগিত করে দেয়। এর আগে ঢাকা উত্তর ও পরে গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিজেদের পরাজয় ঢাকতে আদালতকে প্রভাবিত করে স্থগিত ঘোষণা করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিহিংসা রাজনীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিএনপিকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করার সব কৌশল বাস্তবায়নে সরকার তৎপর বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিকেল সোয়া ৪টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে সোয়া ৫টা পর্যন্ত। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ও পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপান, রাশিয়া, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধি ও ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টরসহ ১৮ দেশের কূটনৈতিক প্রধান উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, রিয়াজ রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, নির্বাহী সদস্য জেবা খান ও তাবিথ আউয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

কেএইচ/এএইচ/এমআরএম

আরও পড়ুন