স্যাটেলাইট প্রকল্পে দুর্নীতির সন্দেহ মওদুদের
স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ প্রকল্পে দুর্নীতির সন্দেহ করেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘সরকার মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। এটা আমাদের সবার জন্য একটা গৌরবের বিষয়। কিন্তু আমরা জানতে চাই, এই প্রকল্পে কত অর্থ অপচয় হয়েছে। কত অর্থের দুর্নীতি হয়েছে। এটা বাংলাদেশের মানুষ জানার অধিকার রাখে।’
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মুক্তির দাবিতে ‘শফিউল বারী মুক্তি পরিষদ’ এ সভার আয়োজন করে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আজকে সরকারের কাছে আমাদের দাবি হলো- এই প্রকল্পে আমাদের কত টাকা খরচ হয়েছে, কীভাবে খরচ হয়েছে, তা দেশের মানুষকে জানাতে হবে। কাদের মাধ্যমে খরচ হয়েছে। কাদেরকে এই চুক্তি দেয়া হয়েছিল এবং কত টাকায় চুক্তি দেয়া হয়েছিল, তা পরিপূর্ণ খরচ করার জন্য যে মনিটরিং করার প্রয়োজন, যে তত্ত্বাবধান করার প্রয়োজন, সেটা করা হয়েছে কি-না।’
কোটা বিলুপ্তির গেজেট প্রকাশের দাবি
অবিলম্বে গেজেট প্রকাশ করে সরকারি চাকরিতে কোটা বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে সাবেক এই উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমরা কী দেখেছি? আন্দোলনের সময় এই প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই এটার সমালোচনা করেছেন। এটার বিরোধীতা করেছেন। কিন্তু যেদিন দেখলো ১০ হাজারের চেয়েও বেশি ছাত্র-ছাত্রী রাস্তায় নেমে এলো, তখন পুলিশ কোথায় চলে গেলো। তখন পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি, এই র্যাবেরও দেখা পাওয়া যায়নি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলে, ‘উনি তো রাজনীতি বোঝেন, সেদিন কারও সঙ্গে আলোচনা না করে সোজাসুজি পার্লামেন্টে গিয়ে এই কোটা পদ্ধতির বিলুপ্তি করার ঘোষণা দেন। তারা চেয়েছিল সংস্কার আর তিনি পুরোটাই বিলুপ্ত করে দিলেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই আন্দোলন চলতে দেয়া যাবে না। এই আন্দোলন যদি চলতে দেয়া হয়, তাহলে সরকার টিকবে না।’
বিএনপির আন্দোলনের ইঙ্গিত
বিএনপির আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে দলটির এই নীতি নির্ধারক বলেন, ‘আমাদেরও সেই অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে। এমন এক সময় আসবে। আসতে বাধ্য। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। যখনই নির্বাচন কাছাকাছি আসবে তখনই দেশের মানুষের মনের পরিবর্তন হবে। তারা পরিবর্তন চাইবে। সেই পরিবর্তন চাওয়ার জন্য তারা রাস্তায় নামবে। স্বাধীন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মুক্তিকামী বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের মানুষকে নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তখন দেশের রাজনৈতিক চিত্রেরও পরিবর্তন হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে সাধারণ নির্বাচন হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধিরাই জয়লাভ করবে। তার নেতৃত্ব দেবেন বেগম খালেদা জিয়া। আমরা মুক্ত বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্বাচন করবো। আমরা মুক্ত বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে জয়লাভ করবো। কারণ দেশের মানুষ অপেক্ষায় আছে।’
সরকারবিরোধী এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে আর ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন কোনো দিন হবে না। কারণ এখন সময় এসেছে প্রতিবাদ জানানোর। এই প্রতিবাদ, মানববন্ধন সেমিনারে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। এখন ভয়-ভীতি শঙ্কাকে উপেক্ষা করে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে। হবে, আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে, আর মাস তিনেক ধৈর্য ধরতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতে দেখবেন যে গাজীপুরে যে গণজোয়ার, এ গণজোয়ার সারা বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনে আসবে। আওয়ামী লীগ সেই গণজোয়ারে ভেসে যাবে। কেউ রক্ষা করতে পারবে না। ’
মওদুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ক্ষীণ হয়ে আসবে। সরকারের প্রশাসনের পুলিশ-বিজিবি আস্তে আস্তে সরে পড়বে। গাজীপুরের চেয়ে খুলনায় বেশি জোয়ার উঠেছে। ঢাকা ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সরকারের কিছু কর্মকর্তাকে কেন্দ্র দখল, কারচুপি করতে পাঠানো হচ্ছে। আমাদের এজেন্টদের ভোট দিতে আসতে দেবে না। জোর করে যে কোনোভাবে হলেও জনগণের কাছে জয়লাভ দেখানোর চেষ্টা করবে তারা। দেশের মানুষ অন্ধ নয়, চোখে দেখে কানেও শোনে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যদি কোনো রকমের অনিয়ম হয়, কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচন হয়, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করবো। নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো। খুলনা মহানগরের নেতারা, ভোটাররা এবং জনগণ সক্রিয় কর্মসূচি পালন করবে।’
মুহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর শরফত আলী সপু প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
কেএইচ/জেডএ/আরআইপি