সরকারকে কঠোর খেসারত দিতে হবে : রিজভী
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবিলম্বে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের সুযোগ এবং তার সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে কঠিন খেসারত দিতে হবে।
রোববার (১৩ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতেই সাজানো মামলায় রায় দিয়ে কারাবন্দি করা হয়েছে। এখন তাকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে প্রতিহিংসার এক বিভৎস প্রতিশোধ নিতে চান কি না তা নিয়ে দেশের মানুষ উৎকণ্ঠিত। আমরা দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে তার (খালেদা জিয়া) পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের সুযোগ করে দিতে এবং সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। তাকে মুক্তি না দিলে অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে কঠিন খেসারত দিতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তির ওপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। তাকে বন্দি রেখে আগামী একদলীয় ফ্যাসিবাদী নির্বাচন করার উদ্যোগ নিলে কঠিন প্রতিরোধে তা নস্যাৎ করা হবে।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের প্রধান নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভিত্তিহীন মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারবন্দি রেখে এখন তার স্বজনদেরও দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। ১০ দিন ধরে পরিবারের কোনো সদস্য তার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। পরিবারের স্বজনসহ আমারা দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থার কোনো খবর পাচ্ছি না।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরাসহ দেশবাসী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বারবার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে না দেয়াটা সরকারের কালো কাপড় ঘেরা গভীর অন্ধকারের মধ্যে এক ভয়াল ষড়যন্ত্রের অংশ।’
বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি নিয়ে রিজভী বলেন, সকল জনমতকে উপেক্ষা করে আকস্মিকভাবে বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। অবিলম্বে এ গোপন চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় ঋণ বাস্তবায়ন এবং সার্বিক সহযোগিতার বিস্তার ঘটাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বলে গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে কি না, সেই সংশয় এখন বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। সেখানে এখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সন্ত্রাসী তাণ্ডব চলছে। নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের দাপটে খুলনা মহানগর জুড়ে এখন শুধুই আতঙ্ক।
তিনি বলেন, ভোটাররা ভীতিমুক্ত পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভোট দেয়া দূরে থাক এখন তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম হুমকির মধ্যে। গতরাতেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হয়েছে, গণ-গ্রেফতার করা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে না যেতে চাপ দেয়া হচ্ছে।
রিজভী বলেন, ধানের শীষের প্রার্থী ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ১৯টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন অভিযোগগুলো আমলে নেয়নি। ইসি নির্বিকার ও নীরব দর্শক। নির্বাচন কমিশন জেগে থেকে ঘুমিয়ে থাকার ভান করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/আরএস/এমএস