সিটি নির্বাচনে বিএনপিতে চাঙাভাব, আছে শঙ্কাও
গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে চাঙাভাব লক্ষ্য করা গেলেও এ নিয়ে তাদের শঙ্কারও অন্ত নেই। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে তাদের অভিযোগ ততই প্রবল হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এই প্রথম নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত দলের আগামী দিনের গতি প্রকৃতি কোন দিকে নিয়ে যাবে তা নিয়েও ভাবছেন দলটির নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ইস্যুতে স্থানীয় নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সমন্বয়ে এবং লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুই সিটিতেই বিএনপি দলীয় মেয়র ছিলেন, যারা এই সরকারের আমলেও বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে দুই সিটিতেই নতুন প্রার্থী দেয়া হয়েছে। ভোটারদের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়লে বিএনপিকে সামনে বড় ধরনের মাশুল দিতে হতে পারে।
তবে বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কেউ বলছেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয় পরাজয় মুখ্য বিষয় নয়। এ বছর জাতীয় নির্বাচনের বছর। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করলে তা জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে বিএনপির জন্য সহায়ক হবে। আর যদি এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ না হয়, এমনকি প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা যদি নাও থাকে সেক্ষেত্রে নির্বাচন বয়কট করে দল একদফা আন্দোলনে যেতে পারে। আর তা সফল হলে তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি নেতাকর্মীদের আস্থা আরও প্রবল হবে।
অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত বা এ নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করতে না পারলে আগামীর আন্দোলনও ফলপ্রসূ হবে না। একবার যদি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয় যে তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে দল নির্বাচন ও আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে তাতে তার নেতৃত্ব নিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
গত মাসের প্রথম সপ্তাহে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নেতাদের যে বৈঠক হয় তাতেই কয়েকজন শঙ্কা প্রকাশ করেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেছিলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেতাকর্মীদের চাঙা করলেও অন্যদিকে তারা প্রশাসনের হয়রানির শিকার হতে পারেন। এ কারণে তারা নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য দলীয় ফোরামে মতামত দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে এসে দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা তাদের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নেতাদের অভিযোগ, পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনকেও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থী কারচুপির আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, ভোটাররা ভোট দিতে পারলে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। এখন চিন্তা জনগণ ভোট দিতে পারবে কি-না।
অন্যদিকে দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে। আগামীতে এই ঝামেলা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তার ভাষায় নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক থাকলে বিএনপির প্রার্থীই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। তিনি বলেন, গাজীপুরের ৪০০ ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে যাতে করে কারচুপি প্রতিরোধ করা যায়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গাজীপুরে তিনভাগ পাবে বিএনপি, আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাবেন একভাগ ভোট, এটা আওয়ামী লীগও জানে। এবার জনস্রোত শুরু হয়েছে। এই দুই সিটির ভোট ইসি ও সরকারের জন্য অগ্নিপরীক্ষা।’ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি এবং তাদের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নেতারা বেশ সক্রিয় রয়েছেন।
গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারবে কি-না এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
কেএইচ/ওআর/আরআইপি