তারেকের নাগরিকত্ব বর্জনের খবরে রিজভীর চ্যালেঞ্জ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন -এমন সংবাদের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আসলেই সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অনর্গল মিথ্যা বলার যে একটি ‘সেন্টার অব এক্সসেলেন্স’ সেটি আবারও প্রমাণ করল।’
সোমবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টা নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ এ প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, ‘লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘লন্ডন হাইকমিশনে নিজের পাসপোর্ট জমা দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। সে কিভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়?’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নির্জলা মিথ্যা কথাটি বলেছেন। পাসপোর্ট সারেন্ডার করে তারাই যাদের ছেলে-মেয়েরা বিদেশিদের বিয়ে করে বিদেশেই নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। বিদেশেই বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থাকে। প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী গর্বের সঙ্গে নিজেকে বৃটিশ বলতেই ভালোবাসেন, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নয়।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী নেতারা নিজেদের সন্তানদেরকে বিদেশিদের সাথে বিয়ে দিয়ে আত্মশ্লাঘা লাভ করেন। যারা বাংলা ভাষা, আবহমান বাংলার সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে মার্কেটিং করতে সদা তৎপর, অথচ তারাই কোন চেতনায় বিদেশিদের কাছে সন্তানদের বিয়ে দিচ্ছেন? সেই চেতনাটি কী সেটি ক্ষমতাসীনদের পরিষ্কার করা উচিৎ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৈশাচিক একদলীয় শাসনের বর্বর আস্ফালনে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যাতনা দিচ্ছে জনগণকে। যারা দেশের জনগণের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে, বেগম পল্লী বানিয়ে গোটা পরিবারকে সেখানে প্রতিপালন করে, তারা আবার কিসের বাংলাদেশি?’
রিজভী বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি -বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে থাকেন তাহলে সেটি প্রদর্শণ করুন। হাইকমিশন তো সরকারের অধীন, তাদের বলুন সেটি দেখাতে। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে মন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা-আত্মা বিক্রির সমতুল্য।’
তিনি বলেন, ‘জুলুম ও নিপীড়ণের বেড়াজালে দেশকে বন্দি করার জন্যই আজ আওয়ামী সরকার স্বৈরাচারী হিসেবে আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছে। মেগা প্রজেক্টের নামে দুর্নীতির টাকা আর সম্পদে ভরপুর হওয়াতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবাজ হিসাবেও খেতাবপ্রাপ্ত। অন্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করলে নিজেদের পাপকে ঢেকে রাখা যায় না, সেটি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘জিয়া পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের মাটি, পানি ও জলবায়ুর সন্তান। সরকারের চক্রান্তে মিথ্যা মামলায় পরিণতি কী হবে সেটি নিয়ে কোনো চিন্তা না করে কিছুদিন আগে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশনেত্রীর দেশে ফিরে আসার পর তাকে দেয়া হয় সরকারি ফরমানে প্রতিহিংসার সাজা। এখন কারাবন্দি থেকে অমানবিক জুলুম সহ্য করে যাচ্ছেন। অথচ দেশনেত্রী বিদেশে গিয়েও সেখানে থেকে যাওয়ার চিন্তা করেননি। দেশনেত্রীর এই ভূমিকাই হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিকের ভূমিকা।’
‘অথচ সে সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক আওয়ামী নেতারাই বলেছিলেন যে, বেগম জিয়া লন্ডন থেকে আর ফিরবেন না। কিন্তু তারা বেগম খালেদা জিয়াকে চিনতে পারেনি। দুর্জয় সাহসে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক মূর্ত প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অন্যায়ের কাছে কখনোই মাথানত করেননি। দেশ থেকে প্যারোলে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী নেত্রী শেখ হাসিনারই দৃষ্টান্ত।’- বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘জিয়া পরিবারের কেউ বিদেশিদের বিয়ে করেননি। পৃথিবীর কোনো দেশে তারা কোনো নাগরিকত্ব গ্রহণও করেননি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট হাইকমিশনে জমার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে উড়ো, অবান্তর কথা বলেছে তার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেছেন, একটা দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক প্রতিবেদন দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের ভাষ্য না নেয়াটা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ। তিনি ওই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখান করেছেন। আমি বলতে চাই, সরকারের ভাষ্য নিলে তো সেটি হবে তাদের একতরফা নির্বাচন, একতরফা অপশাসনের মতো একতরফা বাকশালী ভাষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যেই প্রমাণিত হয় বাংলাদেশে দুঃশাসন চলছে, মানবাধিকারশূন্য বাংলাদেশ। বিরুদ্ধ মত দমনে সর্বগ্রাসী নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করা হচ্ছে। আপনার ভাষায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজেকে নিজেই বিতর্কিত করেছেন, তা হলো সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেই প্রধান বিচারপতি বিতর্কিত হয়ে যাবেন? আর এই কারণেই এস কে সিনহাকে আপনারা সন্ত্রাসী কায়দায় দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহামুদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভুইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/আরএস/পিআর