বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদার চিকিৎসা
কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে বিএনপি নেতাদের দাবির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোববার সচিবালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা না দেয়াসহ বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম খান।
বৈঠকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কারাবন্দি বেগম জিয়া জেলকোড অনুযায়ী সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। তিনি আগেই কতগুলো রোগে ভুগছিলেন। আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডিলাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস- এই সব রোগে তিনি ভুগছিলেন। জেলখানার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে আমরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারটা যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন সেগুলোর বিষয়ে আমরা একের পর এক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
‘এরপরও তিনি কয়েকজন ডাক্তারের কথা বলছিলেন, যেসব বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা তার চিকিৎসা সেবা দিতেন। তিনি জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছিলেন। আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা করেছি। তারা দেখেছেন ও আরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এরমধ্যে একটি পরীক্ষা এমআরআই (রোগ নির্ণয়ে এর মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অংশের নিঁখুত ছবি তোলা যায়), তার শরীরে আর্টিফিসিয়াল নি (কৃত্রিম হাঁটু) তার শরীরে সংস্থাপিত আছে। এই ধরনের মেটাল শরীরে থাকলে নাকি সব মেশিনে তারা এমআরআই করতে পারে না। এ জন্য বিশেষ এমআরআই মেশিন লাগে। এটি তারা আমাদের জানিয়ে গেছেন। এই এমআরআই মেশিনটি ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে, এ জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালের জন্য তারা রিকোয়েস্ট করেছেন।’
‘এ বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা রয়েছেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা যা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির দুই নেতাকে তার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার বিষয়ে বলেছি যে, আমাদের যা যা করার তা করছি। সামনে যা প্রয়োজন হবে সেটাও আমরা করবো। জেলকোড অনুযায়ী হবে, জেলকোডের বাইরে যদি কিছু করতে হয় সেটা আমরা পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেবো। পরামর্শ হচ্ছে ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ।’
তিনি বলেন, ‘আশাকরি তারা (বিএনপির দুই নেতা) ডায়াগনোসিসের (রোগ নির্ণয়) জন্য যেসব বিষয় বলেছেন আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সেসব ব্যবস্থা করব।’
বিএনপি নেতারা বলছেন বেগম জিয়া খুবই অসুস্থ, আসলে তার শারীরিক অবস্থা কী- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আগেই বলেছি, কতগুলো রোগে তিনি আগেই ভুগতেন। সেগুলোর চিকিৎসা তো হচ্ছে। ফিজিওথেরাপিসহ যাই প্রয়োজন হবে জেলকোড অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী যতটুকু করার আমরা করবো।’
জেলকোড অনুযায়ী বেসকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়ে কোনো বাধা আছে কিনা- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জেলকোড অনুযায়ী সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র ও জেলখানায় যে চিকিৎসক রয়েছেন সেগুলোর বিষয়ে নিয়ম-কানুন রয়েছে। আমরা সেই জায়গাটায় বলছি পরামর্শের পর যদি প্রয়োজন হয় সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবো।’
সিদ্ধান্ত কবে নেয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মৃদু হেসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা তো বলে গেছেন এবং আমরাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। আমাদের ডাক্তাররা তো বসে নেই। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সবকিছু হবে।’
বিএনপির ২৫ এপ্রিল মানববন্ধনে বাধা না দেয়া ও ১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশের অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবকিছু স্পষ্ট। আমরা সবসময় বলে আসছি কোনো পলিটিক্যাল পার্টি এমন কিছু করবেন না যাতে আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটে। সেক্ষেত্রেই আমরা বিধিনিষেধ আরোপ করি। তারা মিটিং করতে পারবে কি পারবে না সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আমাদের যা করণীয় আমরা তা করছি।’
‘২৫ এপ্রিল ও ১ মের কর্মসূচির কথা তারা আমাকে বলেছেন, আমি বলেছি যিনি অনুমতি দেবেন সেই ডিএমপি কমিশনারকে আপনারা লিখিতভাবে জানান। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি বা অন্য কোনো অবস্থা না থাকে তবে উনি অবশ্যই ব্যবস্থা করবেন। আমি বলেছি শান্তিপূর্ণ যেসব প্রোগ্রাম দেবেন সেগুলোর কোনোটাতেই পুলিশ কমিশনার বাধা দেবেন না।’
বন্দি অবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তিকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশি পাঠানোর নজির আছে, এ বিষয়টি সরকারের মাথায় আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার (বিএনপি চেয়ারপারসন) যেসব চিকিৎসা এর কোনোটার জন্যই তো তিনি ঘন ঘন বিদেশে যাননি। এমন নজির তো নেই। তিনি দেশে থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা চিকিৎসা করছেন, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বেগম জিয়া নিচে নামতে না পারলে, তার মহিলা আত্মীয়দের কারাগারের দোতলায় ওঠার অনুমতির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জেলকোড অনুযায়ী একটা ইন্টারভেল আছে, সময়টা ঠিক আমার জানা নেই। সেই অনুযায়ীই আত্মীয়, রাজনৈতিক নেতারাসহ সবাই যাচ্ছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন উনি (খালেদা জিয়া) মাঝে মাঝে বলছেন তিনি সবার সঙ্গে দেখা করবেন না। ওনাকে যেন লিস্টটা আগে পাঠিয়ে দেয়া হয়, সেই অনুযায়ী উনি যার সঙ্গে দেখা করতে চান তাকেই নিয়ম অনুযায়ী দেখানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। তারপরও তার আত্মীয়-স্বজন যখনই আসছেন ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। জেলকোড ও তার গুরুত্ব বিবেচনা করেই সবসময় ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
আরএমএম/এনএফ/বিএ/পিআর
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - রাজনীতি
- ১ খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
- ২ আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলার যৌক্তিকতা নেই: মঈন খান
- ৩ দোসররা আওয়ামী লীগকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে: জাতীয় নাগরিক কমিটি
- ৪ বাংলাদেশ পাকিস্তানও হবে না, আফগানিস্তানও হবে না: ডা. শফিকুর রহমান
- ৫ চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ করার উসকানি, জামায়াতের নিন্দা