খালেদাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি বিএনপির
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতারা। রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এই দাবি জানান।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করছে না সরকার- এমন দাবি করে বিএনপি নেতারা বলছেন, ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এজন্য স্কয়ার বা বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করার দাবিও জানিয়েছে দলটির নেতারা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কারাবিধি মেনে খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি সুস্থ আছেন।
এই প্রেক্ষাপটে আজ বেলা ১১টা ২৮ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে আসেন বিএনপির দুই নেতা। দুপুর ১২টা ২ মিনিটে বৈঠকে যোগ দেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। সোয়া ১২টার দিকে শেষ হয় বৈঠক।
খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে দাবি করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সম্প্রতি যেটা গুরুতর ঘটনা সেটা হল উনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উনি চলতে পারেন না। কয়েক মাস আগে লন্ডনে ওনার অপারেশন হয়েছে। একটা চোখ অনেক লাল হয়ে গেছে। ওনার অর্থোপেডিক প্রবলেম আছে, তার দুই পায়েই রড বসানো। উনি হাঁটতে পারছেন না। দুর্বল বোধ করছেন খুব বেশি। নানা রকমের কমপ্লিকেশন আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুইদিন আগে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম সরকারের অনুমতিক্রমেই। কিন্তু জেলগেট থেকে আমরা ফেরত এসেছি। এর পরের দিন তার (খালেদা জিয়া) আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতে গিয়েছিলেন। তারাও দেখা করতে পারেননি, ফিরে এসেছেন জেলগেট থেকে। প্রথম দিন বলা হয়েছিল অন্য কথা, পরের দিন জানানো হয়েছে- উনি হাঁটতেই পারছেন না, দোতলা থেকে নিচে নামতে পারছেন না, এজন্য দেখা হবে না।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি যে, ওনার (খালেদা জিয়া) সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এই চিকিৎসা যেহেতু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভর, অতএব উপযুক্ত স্থানে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করা হোক। আমরা বলেছি যে, ইউনাইটেড হাসপাতালে আগেও ওনার পরীক্ষা হয়েছে। সেখানে যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন সেই ডাক্তারদের প্রতি তার আস্থা আছে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘চাইলেই তারা সেখানে চিকিৎসা করাতে পারেন। এতে অন্য কারো অনুমতির দরকার হয় না। এজন্য কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই যথেষ্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য পজেটিভ। তিনি আইজি প্রিজন সাহেবকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। ওনার সামনেই কথা হয়েছে। যেখানে তার (খালেদা জিয়া) ভাল চিকিৎসা বা পরীক্ষা করা সম্ভব সেখানে তা করার বিষয়ে তার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সম্মতির কথা জানিয়েছেন। এখন আমরা অপেক্ষা করব আইজি প্রিজন সাহেব কী ব্যবস্থা নেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা আশা করব তাকে ইউনাইডেট হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’
বেশ কিছুদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি নেয়া প্রয়োজন জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সেটাও জেলখানায় সম্ভব নয়। অন্য কেউ এসে শিখিয়ে দিয়ে যাবে, জেলখানায় নার্সরা করবে, এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আপনারা জানেন ফিজিওথেরাপিতে কোনো ভুল হলে সেটা বরঞ্চ স্বাস্থ্যের জন্য, রোগের জন্য আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেজন্য আমরা বলেছি, প্রফেশনাল ফিজিওথেরাপিস্ট দিয়ে ফিজিও থেরাপি দিতে হবে।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই আলোচনার পাশাপাশি এও আলোচনা করেছি যে, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আমরা যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনে যাতে কোথাও বাধা সৃষ্টি করা না হয়। উনি বলেছেন, এটা উনি সংশ্লিষ্টদের বলবেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা ২৫ এপ্রিল প্রেস ক্লাব কিংবা বিএনপি অফিসের সামনে মানববন্ধন করতে চাই। আমরা বলেছি, সেটা আমরা যাতে করতে পারি কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। এছাড়া আমরা শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক জনসভা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের অনুমতি চেয়েছি। আমরা বলেছি, আপানারা তাদের বলে দেবেন যাতে অনুমতি আমরা পাই। এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস, এই দিবস পালনে কাউকে বাধা দেয়া উচিত হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আলোচনায় আমরা যে জবাব পেয়েছি তা ইতিবাচকই মনে করি। কিন্তু অপেক্ষা করতে হবে, ফলাফল কতদূর কী হয়।’
আপনারা কতদিন অপেক্ষা করবেন- জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা তো আশা করি আজকেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। চিকিৎসার জন্য তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। একজন অসুস্থ মানুষকে যতদ্রুত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব সেটা করা উচিত।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি আরেকটা কথা বলেছি তাদেরকে- উনি (খালেদা জিয়া) যদি দোতলা থেকে নিচে নামতে না পারেন, তাহলে তার মহিলা আত্মীয়-স্বজনদের দোতলায় উঠে তার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা উচিত। আশা করছি তারা সেটা করবেন। কারণ মানুষ অসুস্থ হলে আত্মীয়-স্বজনদের দেখলে খুশি হয়, রোগের উপশম হয়। কাজেই সেই অনুরোধটাও তাদের করেছি।’
বন্দি অবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তিকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার নজির আছে- এ বিষয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই প্রশ্ন আসে কেন আমি বুঝি না। কারণ তার চিকিৎসা আমরা এখানকার হাসপাতালেই করার কথা বলছি। এখানেই যদি চিকিৎসা হয়ে যায় তাহলে অন্য আর প্রশ্ন আসবে কেন? কেউ এই প্রসঙ্গটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তুলছেন বলে মনে করি। বাইরে তাকে পাঠানোর কোনো প্রশ্ন আসছে না এখানে।’
বেগম জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে আপনারা কীভাবে জানছেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন, ডাক্তাররা তাকে দেখতে গেছেন সেই ডাক্তারদের কাছ থেকে জেনেছি। এর চেয়ে ভাল সূত্র আর কী হতে পারে।’
আরএমএম/এমবিআর/জেআইএম
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - রাজনীতি
- ১ খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
- ২ আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলার যৌক্তিকতা নেই: মঈন খান
- ৩ দোসররা আওয়ামী লীগকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে: জাতীয় নাগরিক কমিটি
- ৪ বাংলাদেশ পাকিস্তানও হবে না, আফগানিস্তানও হবে না: ডা. শফিকুর রহমান
- ৫ চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ করার উসকানি, জামায়াতের নিন্দা