‘গুরুতর অসুস্থ’ খালেদা, স্বজনরাও সাক্ষাৎ পাননি
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ অভিযোগ করে বলেছেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পা, হাঁটুসহ সারা শরীরে ব্যথা এতটাই তীব্র হয়েছে যে, তিনি তার জেলকক্ষ থেকে ওয়েটিং রুম পর্যন্ত আসতে পারেননি।’
প্রসঙ্গত, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার স্বজনরা শুক্রবার বিকেলে কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। ‘দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জানান, বেগম জিয়া অসুস্থ। এ কারণে তিনি দেখা করতে পারবেন না’- এমন মন্তব্য রিজভীর।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজ বিকেল সোয়া ৪টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর কারা কর্তৃপক্ষ পরিবারের সদস্যদের জানান যে, বেগম জিয়া অসুস্থতার কারণে দেখা করতে পারবেন না। সুতরাং কারা কর্তৃপক্ষও স্বীকার করলো যে, বেগম জিয়া অসুস্থ।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আমরা গত কয়েক দিন ধরে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবনতিশীল স্বাস্থ্যের বিষয়ে অবহিত করেছি। কিন্তু দেশনেত্রীর অসুস্থতার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গড়িমসি নিয়েও বারবার আপনাদের মাধ্যমে (গণমাধ্যম) অবহিত করেছি। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন সাড়া দেয়নি। বরং তারা দেশনেত্রীকে নিয়ে সরকারের অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।’
‘বারবার আবেদনের সত্ত্বেও সরকারের সংকীর্ণনীতির অংশীদার জেল কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরকেও কারাগারে শারীরিকভাবে অসুস্থ দেশনেত্রীর সঙ্গে দেখার অনুমতি দিচ্ছে না। এমনকী সরকারের নির্দেশিত মেডিকেল বোর্ডও বেগম জিয়াকে অর্থপেডিক বেড দেয়ার জন্য যে সুপারিশ করেছিল সেটিও কারা কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেনি। এ ঘটনায় সরকারপ্রধানের এক সর্বব্যাপী প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষের প্রতিফলন ফুটে উঠছে। স্বামীহারা, সন্তানহারা ও অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে বর্ষিয়ান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্যাতন করা ক্ষমতাসীনদের নীচ রাজনৈতিক চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ।’
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘আসলে দেশনেত্রীর গুরুতর অসুস্থ বলেই তিনি তার নিকটজনদের সঙ্গে কারা কার্যালয়ের ওয়েটিং রুমে হেঁটে এসে দেখা করতে পারেননি। এ ঘটনা দেশের আপামর জনসাধারণকে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন ও ব্যথিত করে তুলেছে। কেন ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরকে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য দেখা করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না? কেন দেশনেত্রীর পছন্দ মতো রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না?’
তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র নিয়ে যাবার পরও কোন অজ্ঞাত কারণে গতকাল বিএনপি উচ্চপর্যায়ের তিন নেতাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি? সব মিলিয়ে এক গভীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের আভাস পাচ্ছি আমরা। সরকারের মদদে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের গড়িমসি, অবহেলা ও উপেক্ষার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার জন্য তার পছন্দানুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির জোর দাবি জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, য্গ্মু মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল মির্জা ফখরুল কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। পরের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নেয়া হয় বিএনপি চেয়ারপার্সনকে।
গত ২৯ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের সাক্ষাতের কথা থাকলেও বিএনপিনেত্রীর অসুস্থতার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। বিএনপি তার অসুস্থতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে পরবর্তীতে সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। চার সদস্যের ওই বোর্ডের সদস্যরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা ‘গুরুতর নয়’।
কেএইচ/এমএআর/পিআর