ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

শরিকদের বড় চাওয়ায় জট বাঁধছে জোটে

ফজলুল হক শাওন | প্রকাশিত: ০৭:৩৮ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

এগিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আগামী ডিসেম্বরেই নির্বাচন করতে আগ্রহী। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শরিকরা আগে ভাগেই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সারতে চায়। বিএনপি নির্বাচনে আসলে জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করবে। সে ক্ষেত্রে শরিকরা আওয়ামী লীগের কাছে যে পরিমাণ আসন দাবি করছে তা মিটালে হারিয়ে যাবে দলের শত নেতা। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের একশ এমপি প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। শেষ পর্যন্ত শরিকদের এত আসন চাওয়ায় জোটে জট বাঁধছে কি-না সে বিষয়েও অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শরিকরা ১৭০টি আসন চাইলেও এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো কথা বলা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম তাদের কাজ করতে বলেছেন। তবে শরিকরা যত আসনই চাক না কেন শেষ পর্যন্ত আসন নামক পিঠার ভাগাভাগিটা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতেই থাকবে। তিনিই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে, ৪১টি দল নিবন্ধিত। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও এনডিপির নিবন্ধন স্থগিত আছে। বাকি ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ জোটে আটটি, বিএনপি জোটে আটটি এবং জাতীয় পার্টির জোটে দুইটিসহ ১৮টি দল জোটভুক্ত আছে। আর জোটভুক্ত নয় এমন ২১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কদর এখন বেড়েছে। তারা হিসাব কষছে কোন দিকে গেলে লাভবান হবে। এজন্য তারা ভেতরে ভেতরে কথা চালাচালি শুরু করেছে।

১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে বিষয়টি জানিয়েছেন শরিকরা। এ বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচন কাছাকাছি এলে এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন আওয়ামী লীগের অন্য নীতিনির্ধারকরাও। ১৪ দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গেও এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। নাসিম বলেন, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন, শরিকরা চাইতে থাকুক। আলোচনা করে সিন্ধান্ত নেয়া হবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন আশ্বাসের পর এখন শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছে শরিক দলগুলো।
এরই মধ্যে শরিক সব দলই আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী তালিকাও তৈরি করে ফেলেছে। বেশির ভাগ দলই নিজস্ব প্রার্থীর তালিকার পাশাপাশি দরকষাকষির জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাও করে রেখেছে। জয়লাভের সম্ভাবনা বিবেচনায় এনেই এসব তালিকা করা হচ্ছে বলে দাবি শরিক দলগুলোর নেতাদের। সব মিলিয়ে ১৪ দলের শরিকরা আগামী নির্বাচনে ১০০টি আসনের নিশ্চয়তা চাইছে আওয়ামী লীগের কাছে। গেল নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে মাত্র ১৬টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আগামী নির্বাচনে অন্তত ১৫টি আসনে জোটের মনোনয়নের নিশ্চয়তা চাইছে। দলের সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ঢাকা- ৮ ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী- ২ আসনসহ বর্তমান সংসদের নির্বাচিত দলীয় ছয় এমপির আসন তাদের প্রত্যাশায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। একইভাবে জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া- ২ ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনী-১ আসনসহ ১৫টি আসন চাইছে দলটি। জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়ার দল ১০টি আসন চায়। বর্তমানে তাদের দু’জন সংসদ সদস্য আছেন। তবে তাদের দাবি তানসেন ও সংরক্ষিত আসনের লুৎফা তাহের তাদের সঙ্গে আছে। এ দু’জন থাকলে তাদের অংশে সংসদ সদস্য আছেন চার জন।

জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পিরোজপুর- ২ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের মাদারীপুর- ৩ আসনসহ ৫টি, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর চট্টগ্রাম- ২ আসনসহ ১৫টি আসনের দাবি তুলেছেন তারা। জোটের আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার চট্টগ্রাম- ১ আসনসহ অন্তত ৬টি আসন চায় তার দল।

গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী সিলেট- ১ আসনসহ ১০টির বেশি আসনে মনোনয়নের নিশ্চয়তা চায়। কমিউনিস্ট কেন্দ্র চাইছে দলের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসীত বরণ রায়ের জন্য দুইটি আসন। এছাড়া ন্যাপ, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং বাসদসহ শরিক অন্য দলগুলো মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে ১০টি আসন আশা করছে আওয়ামী লীগের কাছে।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, আসন চাওয়ার বিষয়ে এখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা সারা দেশেই কাজ করছি। নির্বাচনকে সামনে রেখেই স্যার (এরশাদ) উত্তরাঞ্চল সফর করেছেন। আমরাও যার যার এলাকায় কাজ করছি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কাছে এবার ৭০টি আসন এবং ১০টি মন্ত্রণালয় দাবি করেছে। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে হাওলাদার বলেন, ওটা হয়তো স্যারের প্রত্যাশা। তবে এটা নিয়ে এখনও আওয়ামী লীগের কারও সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়নি।

১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আগেভাগেই নির্বাচনী আসনের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার পক্ষে। এতে নির্বাচনের ঠিক আগে ভুল বোঝাবুঝির শঙ্কা থাকবে না। তিনি বলেন, ১৪ দলীয় জোটে এখনও কোনো দলকে নির্দিষ্ট করে কোনো আসনে প্রার্থী করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। বরং সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নির্দেশনা আছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের সঙ্গে কথা হয় আসনের বিষয়ে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে খুব শিগগিরই আমরা আলোচনা শুরু করব। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আরও শক্তিশালী করা জন্য আমরা কাজ করছি। পরাজিত শত্রুরা যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য কাজ করছি।

১৪ দলীয় জোটের শরিক দল গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাহাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এবার আমরা ১০টি আসন দাবি করব। আমাদের অনেক যোগ্য প্রার্থী আছে। গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলীর সিলেট-১ আসন ছাড়াও সুনামগঞ্জ, গাজীপুর,পাবনা চাটমোহর, ফেনী, নোয়াখালী, বরগুনা, ডেমরা ও ঢাকার দু’টি আসনে আমাদের প্রার্থীরা কাজ করছে।

কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসীত বরণ রায় গোপালগঞ্জ-২ শেখ ফজলুল করিমের আসনে নির্বাচন করার জন্য কাজ করছেন এলাকায়। তিনি বলেন, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম আমাদের কাজ করার কথা বলেছেন। আসন ভাগাভাগির সময় এলে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান। কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানসহ পার্টির আরও কয়েকজন নির্বাচন করতে চান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ভাই যে কোনো জায়গা থেকে নির্বাচন করলে জিততে পারবেন। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ নেই। তিনি তার দলের জন্য চারটি আসন দাবি করেন।

এফএইচএস/ওআর/পিআর

আরও পড়ুন