ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

মেননের পোস্টারে উধাও ‘কাস্তে -হাতুড়ি’

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৭:৩৭ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

আদর্শবাদী রাজনীতির কারিগর বলে পরিচিতি তার। আদর্শের কাছে নতি শিকার না করে বহুবার দল ত্যাগ করেছেন, দল গড়েছেন। সাম্যবাদী রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয় নিয়েই বাম রাজনীতিতে তার দীর্ঘ পথচলা।

এখন সবই যেন ইতিহাস। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকারের শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে নেতৃত্বে আসা রাশেদ খান মেনন এখন সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন নিয়েও সমালোচনা করেন। তার পোস্টারে এখন কাস্তে আর হাতুড়ি-ও খুঁজে পাওয়া যায় না। কাস্তে আর হাতুড়ির মেলবন্ধনে যে প্রতীক শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চারের কথা বলে, সম্প্রতি রাজধানীতে রাশেদ খান মেননের সাটানো পোস্টারে কাস্তে-হাতুড়ির চিহ্ন মাত্র নেই।

ইতিপূর্বে রাশেদ খান মেননের সব পোস্টার বিপ্লবের প্রতীক লাল রঙের হলেও এবারের পোস্টারে লালের চিহ্নও নেই। ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও লড়াই করো’ বিপ্লবী স্লোগানটিও নেই ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের পোস্টারে। রাজধানীর নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-৮ আসনে সম্প্রতি নগরবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার সাটিয়েছেন রাশেদ খান মেনন। পোস্টারে নিজ দলের প্রতীক না থাকলেও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’ স্লোগানের জায়গায় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখা হয়েছে। নববর্ষের এই পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর একটি বাণীও রয়েছে।

পোস্টার প্রসঙ্গে কথা হয় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজ কল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে। পোস্টারে কাস্তে-হাতুড়ি না থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘পোস্টারটি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে করা। এ কারণে প্রতীক যুক্ত করা প্রাসঙ্গিক মনে হয়নি।’

স্লোগানের ব্যাপারে জানতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে বলেন, ‘নির্বাচনী ওয়ার্ডে ওর্য়াডে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও এ পোস্টার লাগিয়েছেন। জোটের বড় দল তো আওয়ামী লীগ-ই।’

পোস্টারে আওয়ামী লীগের স্লোগান-ই মুখ্য হয়ে উঠেছে এবং এসবের মধ্য দিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি এখন আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করে কি-না এমন প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হন মন্ত্রী। বলেন, ‘তা হবে কেন?’ এরপর ফোন কেটে দেন মেনন।

ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন বাষট্টির আয়ুববিরোধী সামরিক শাসন ও শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে আসেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) ও ’৬৪-৬৭ সালে পূর্বপাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। বাষট্টি সালে নিরাপত্তা আইনে প্রথম কারাবন্দি হওয়ার পর ’৬৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ও মেয়াদে নিরাপত্তা আইন, দেশরক্ষা আইন ও বিভিন্ন মামলায় কারাবরণ করেন। ’৬৪-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে ছাত্র সমাজের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কুখ্যাত মোনেম খানের আগমনকে বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন এবং পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলে জেল থেকে এম এ পরীক্ষা দেন। ’৬৭-৬৯ জেলে থাকাকালীন অবস্থায় তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ক্যান্টনমেন্টে নীত হওয়ার আগ পর্যন্ত জেলের বাইরে তার যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন কৃষক সমিতিতে যোগ দেন ও ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলনের সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০-এর বাইশে ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানের জনসভায় ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ কায়েমের দাবি করায় ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ও তার অনুপস্থিতিতে সামরিক আদালতে সাত বছর সশ্রম কারাবাস ও সম্পত্তির ষাট ভাগ বাজেয়াপ্তর দণ্ডদেশ দেয়। তিনি তখন আত্মগোপন করে স্বাধীনতার লক্ষ্যে কৃষকদের সংগঠন গড়ে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধেও ইতিপূর্বে কঠোর অবস্থান ছিল মেননের।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনীত করা হয়। এরপর কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে পরপর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এএসএস/এএইচ/পিআর

আরও পড়ুন