আমি একটু ভয়ে ছিলাম, জেলে থাকা প্রসঙ্গে গয়েশ্বর
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘ আমার মনে হয় আমরাও বেশিদিন শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তির কথাটা নিয়ে আমাদের রাজনীতির অ্যাক্টিভিটিস সীমাবদ্ধ রাখব না।’
তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে, আজকে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করা। সরকারের পতন হলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে। সরকারের পতন হলে জনগণ মুক্তি পাবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং জনগণের মুক্তি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
নিজে এবং দলের নেতাদের কারাবরণ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি একটু ভয়ে ছিলাম হয়ত আমাকে দিয়ে যে উদ্ধোধন করছে হয়ত এটা সিরিয়ালটা বাড়বে। যা হোক যে কোনো কারণে হয়ত সরকার ওই পদক্ষেপে যায় নাই। অথবা আমাদের নেতারাও কিন্তু ঘরে ঢুকে থাকে নাই।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো জিনিস আমার কাছে যেটা, জেলখানায় বসে মনে হয়েছে ইন অ্যাবসেন্স আওয়ার চেয়ারপারসন, উই আর কমপ্লিটলি ইউনাটেড টু ফেস অল দিস প্রবলমে। এই যে ইউনিটি, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এটি সফলতার পূর্বশর্ত। আমরা সফল হবো, কারণ আমাদের আন্দোলন বিএনপির স্বার্থের জন্য নয়। আজকে আমরা জানি বর্তমান সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বের হতে দেবে না। স্পষ্ট বলছি বের হতে দেবে না। কারণ এখানে আদালতের কিছু করার নাই। আদালত অলরেডি কন্ট্রোল বাই দ্য গভর্নমেন্ট। যদি তা না হতো, যেদিন রায় হয়েছে তার সাতদিনের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেতেন।’
সদ্য কারামুক্ত বিএনিপর এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমি জেলখানায় দেখেছি, যাদের পাঁচ থেকে ১০ বছর জেল হয়েছে তারা হাইকোর্ট থেকে মুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যে বের হয়ে গেছেন। সুতরাং এই সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় ওনাকে (খালেদা) বন্দি করেছে। সুতরাং রাজনৈতিভাবেই তাকে মুক্ত করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আর জনগণের ভোটের অধিকারের আন্দোলনটা একই সূত্রে গাঁথা। সে কারণে আমরা খুব কনফিডেন্ট যে দেশের জনগণ আছে। তারা যদি ভোট দিতে পারে তাহলে নৌকার পাত্তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা আমার চেয়ে বেশি জানেন যিনি সরকার চালাচ্ছেন তিনি। সে কারণে তিনি নানাবিধ কূটকৌশল, ষড়যন্ত্র, অত্যাচার, নির্যাতন, যা কিছু আছে আপনারা সব কিছু স্বচক্ষে দেখছেন।’
সরকারবিরোধী এই নেতা বলেন, ‘কিছু লোককে কিছুদিন জুলুম অত্যাচারের মাধ্যমে দাবানো যায়, সবলোককে সবসময় কিন্তু দাবানো যায় না। কোনো কালেই কোনো দেশই কিন্তু পারে নাই। আর পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো তারা যেভাবে ব্যবহার করছে, অতীতের ইতিহাস বলে, পৃথিবীর ইতিহাস বলে, কোনো দিন এসব সংস্থা এবং পুলিশ কখনও কোনো সরকারকে রক্ষা করতে পারে নাই। জনগণের কাছে তাদের পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে। এই সরকারকেও পরাজয় স্বীকার করতে হবে। জনগণের অধিকার তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘ আপনারা হয়ত অনেকেই মনে করছেন যে বিএনপি শেষ। না বিএনপি শেষ হতে পারে না। আওয়ামী লীগের অত্যাচার নির্যাতন অগণতন্ত্রিক শক্তির বিচরণ যত বাড়বে তত গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হবে এবং তাদের শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘এটাই কিন্তু স্বাভাবিক। এই আওয়ামী লীগও কিন্তু একসময় দেখা গেছে, সারাদিন খুঁজলেও আওয়ামী লীগকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু ছাত্ররা ৬৯ এ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেদিন এই বাধ ভাঙল। মাওলানা ভাসানী যখন ক্যান্টমেন্টের দিকে মিছিল নিয়ে গেলেন তখন কিন্তু লোকে বলে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে যে, শেখ মুজিবের জন্য যে ফাঁসির দড়ি তৈরি হয়েছিল। সেই ফাঁসির দড়িও কিন্তু সেদিন টিকে নাই। সে কারণেই বলব যে, অটোক্রেসি, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেক বাধ দেয়া যাবে। অনেককে শিকল পড়ানো যাবে, কিন্তু সময়মতো কিন্তু তাদের রক্ষা করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি শুধু তাদের এই দলের অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি। জেলখানায় গেলে তো অনেক বই পড়া যায়। বই পড়লে তো ইতিহাসগুলো জানা যায়। আর এই ইতিহাস তো জানারও সুযোগ আছে। ১৯৬৬ সাল থেকে আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে যেহেত সম্পৃক্ত আছি। বাংলাদেশের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে উত্থান-পতন তো স্বচক্ষে দেখারও সুযোগ হয়েছে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জাম সেলিম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা রফিক শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/জেডএ/পিআর