অর্থবানদের তালিকায় নাম আসায় গর্বিত : নজরুল
বিএনপির শীর্ষ আট নেতার অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেনের যে অভিযোগের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করার কথা বলেছে তা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন দলটির নেতারা।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্ত আট নেতার মধ্যে চারজন উপস্থিত থেকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
অস্বাভাবিক লেনদেনে অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান একটি অনলাইন পত্রিকার নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এই অনলাইন পত্রিকা এর আগে একবার লিখেছিল যে সিঙ্গাপুরে আমার একটা বিলাসবহুল ফ্ল্যাট আছে। খুব খুশি হয়েছিলাম শুনে। কারণ সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের কোটি কোটি টাকা দাম। আমি এ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলাম এটা ছাপাও হয়েছে। যে এমপি সাহেব এটা প্রচার করেছেন, ভোটারবিহীন ওই এমপি সাহেবকে বলেছিলাম, আমি নিজেই আপনাকে ওই অ্যাপার্টমেন্টটি লিখে দিতাম, কিন্তু আমি ওটার ঠিকানা জানি না। সেজন্য আপনি একটা দলিল লিখে নিয়ে আসেন, খালি ২৫ লাখ টাকা দিলে বাড়িটা বেঁচে দেব। কারণ সিঙ্গাপুরের একটি বিলাসবহুল ফ্লাটের দাম অনেক টাকা। কিন্তু ওনারা এটি নিয়ে আর এগিয়ে আসেননি। আমি খুঁজে পেলাম না আমার অ্যাপার্টমেন্ট কোথায় আছে?’
তিনি বলেন, ‘এবার দেখলাম আমাকে সম্মান আরও বেশি দেয়া হয়েছে। আমাদের সিনিয়র মন্ত্রী একজন সাবেক এফবিসিসিআই চেয়ারম্যান, অন্যজন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন, তারা বেশ অর্থবান বলে পরিচিত, তাদের মধ্যে তালিকায় আমার নাম নিয়ে আসায় এটা গর্বিত বোধ করার কথা। ওনাদের কথা বলেছেন কোন ব্যাংকে টাকা আছে, আমার কথা কিছু বলে নাই। আমাকে, সোহেলকে (যুগ্ম মহাসচিব) মিলিয়ে লিখেছে যে সাত কোটি টাকা লেনদেন করেছি। এটা আমার জন্য বেশিই হয়ে গেছে। জীবনে সাত কোটি টাকা লেনদেন করছি বলে মনে হয় না।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের বলেছিলাম যে এটা ভালো, কোন জায়গা লুকিয়ে রাখা হয়েছে, আমি ভুলে গেছি। হতে পারে এই টাকাটা আমার কোনো দরকারে লাগবে। বলেছিলাম সাত কোটি নয় ওখান থেকে সাত লাখ টাকা দিলে আমার বড় উপকার হয়। পরিবারে অসুস্থ লোক রয়েছে। চিকিৎসার জন্য বড় উপকার হয়। আশা করি ওই অনলাইন এবং দুদক এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এগুলো এক ধরনের নোংরা রসিকতা। কোনো মানুষের সন্মানহানির আগে একশ’ বার চিন্তা করা উচিত। সরকার হুকুম করেছে যেই লোকগুলো সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে এদের বিরত রাখো, এদের ভয় দেখাও, এদের থামাও। আর দুদক দাবি করে তারা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। অথচ সরকারের হাতের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা বানোয়াট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ করছে। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নাই।’
তিনি বলেন, ‘ওই অনলাইনকে বলি এটা কার প্রতিষ্ঠান বুঝা মুশকিল। কারণ দুদকের আগে তারা গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পায়। এটা কি গোয়েন্দা সংস্থার কোনো প্রতিষ্ঠান নাকি? নাকি সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান, সরকারের হুমুকে গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন শুধু সংসদে আলোচনা হয় না। দুদক রিকোগনাইজড করে, সরকার রিকোগনাইজড করে বুঝি না কিছু। অনলাইন আছে বলে, পত্রিকা আছে বলে বা মিডিয়া আছে বলে যা খুশি তা লেখার অধিকার কারও নেই। আমাদেরও পরিবার-পরিজন আছে, আত্মীয়স্বজন আছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি-সংগ্রাম করে এই জায়গায় এসেছি। আমাকে যারা চিনে তারা কেউ এই প্রতিবেদন বিশ্বাস করবে না। কিন্তু তারপরও এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির যে অপচেষ্টা করা হয়েছে আমি এটার নিন্দা জানাই।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি চাইব হয় তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে আর না হয় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া লাগবে। এটা সবারই করা উচিত। বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে বলি ওই অনলাইনের মতো এই গল্প বানানোর কারখানাকে ব্যবহার করেন, দুদক নামে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত আপনাদের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেন কোনো লাভ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি বিশ্বাস রেখে। আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। এখান থেকে আমাদের সরানো যাবে না। হ্যা, পারবেন আপনারা। বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে কারাদণ্ড দিয়েছেন, আমাদেরও দিতে পারেন। গ্রেফতার করতে পাবরেন। যদি চান আরও ক্ষতি করতে পারবেন সে ক্ষমতা আপনাদের আছে। কিন্তু আমাদের নীতিভ্রষ্ট করতে পারবেন না। আমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে পারবেন না। কাজেই যে চেষ্টা করছেন এটা অপচেষ্টা, এটা অন্যায় চেষ্টা, এ ধরনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।
কেএইচ/জেডএ/আরআইপি