আওয়ামী লীগের ভাবনা শুধুই নির্বাচন
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভাবনা এখন শুধুই নির্বাচন। এ লক্ষে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে মাঠে কাজ করছেন নেতারা। সম্ভাব্য এমপিপ্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় এখন ঘনঘন যাচ্ছেন। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা, বিএনপির কর্মসূচি, আন্দোলন বা সমঝোতা কোনোদিকেই নজর না দিয়ে আওয়ামী লীগের নজর শুধু ভোটের দিকে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। গত ৩০ জানুয়ারি সিলেটের জনসভার মধ্য দিয়ে তিনি শুরু করেন অনানুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর জনসভায় নৌকামার্কায় ভোট চেয়েছেন। এছাড়া আগামী ৩ মার্চ খুলনায় এবং ৭ মার্চ রাজধানীতে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব জনসভায়ও প্রধানমন্ত্রী নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করবেন।
দলের নেতারা জানান, সম্ভাব্য প্রত্যেক প্রার্থীকেই এলাকায় গিয়ে কাজ করতে বলেছেন শেখ হাসিনা। এখন আওয়ামী লীগের সামনে অন্যতম লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়া। রাজনৈতিক দল বিএনপি কী করলো বা করবে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই। সবাই যে যার রাজনীতি করে। বিএনপি বিএনপির রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো হাত নেই। আর মামলাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের। কাজেই বর্তমান সরকারের ওপর দোষারোপ করা ঠিক নয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার সাজা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, মামলা করল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, রায় দিল কোর্ট আর দোষ হলো সরকারের।
এ বিষয়ে দলের নেতারা বলেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন। এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসব মিথ্যাচার করে বিএনপি খুব বেশি লাভ করতে পারবে না। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো বাগবিতণ্ডারও দরকার নেই। আওয়ামী লীগের পুরো মনোযোগ এখন আগামী নির্বাচনকে ঘিরে। কারণ ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুতরাং সেই নির্বাচনকে লক্ষ করেই দল অগ্রসর হচ্ছে।
নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের ১৫টি টিম সারাদেশে কাজ শুরু করে দিয়েছে। টিমের নেতারা বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন, সাংগঠনিক সভা করছেন। কোনো জেলায় কোনো সমস্যা থাকলেও সেটারও সমাধান করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে অন্তঃকোন্দলও মিটিয়ে ফেলছেন। এছাড়া আগামী নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতাদের কিছু গাইডলাইনও দিচ্ছেন। দলের মধ্যে যেন একাধিক প্রার্থী বা বিদ্রোহী না থাকে সে বিষয়েও আগে থেকেই স্থানীয় নেতাদের সতর্ক করা হচ্ছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। নেতারা ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশেই প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষে কয়েকদিন আগেই আমি ফরিদপুরে জনসভা করেছি। সাংগঠনিক সফরের অংশ হিসেবে গত শনিবার ওখানে জনসভা হয়। সেখানে সাজেদা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, দীপু মনি, আবদুর রহমানের মতো কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, লেফটেনেন্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান জাগো নিউজকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। লক্ষ্য একটাই সেটা হলো নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের জয়। দলের প্রতিটি সংসদীয় আসনে দলের নেতারা যাচ্ছেন, বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় নেতাদের বলছেন, গত নয়বছরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে। সাধারণ জনগণ যেন আবারও নৌকায় ভোট দেন সে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সামনে আমাদের লক্ষ্য একটাই সেটা হলো নির্বাচন। আগামী নির্বাচনে দলের জয় নিশ্চিত করা এখন আমাদের প্রধান কর্তব্য। তাই সারাদেশে যে সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে তা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। বর্তমানে বিভাগীয় ও জেলা শহরে সফর শুরু হয়েছে। এরপর উপজেলা পর্যায়ে সফর করা হবে। এর মধ্য দিয়ে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হবে।
এফএইচএস/জেডএ/জেআইএম