তৃণমূলের অভিযোগের তীর কেন্দ্রের দিকে
বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে কেন্দ্র তথা রাজধানীতে বিএনপির জোরালো ভূমিকা না থাকায় বারবার ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে পিছু হটতে হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। দলের বর্তমান অবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দুষেছেন অনেকে। এছাড়া অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ আন্দোলনে আরও সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। আগামীতে আন্দোলনে ঘরে বসে না থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।
শনিবার রাজধানীর লা মেরিডিয়ানে অনুষ্ঠিত দলের নির্বাহী কমিটির সভার দ্বিতীয় সেশনে তৃণমূল নেতারা তাদের বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন সভায় সভাপতিত্ব করেন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় প্রথম সেশন। এরপর এক ঘণ্টা মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে সোয়া ৬টা পর্যন্ত চলে দ্বিতীয় অধিবেশন।
দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের প্রায় ২ বছর পর অনুষ্ঠিত ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির সভার প্রথম অধিবেশনে শোক প্রস্তাব, মহাসচিবের প্রতিবেদন ও খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখেন। সভায় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় সেশনে ইনডোর প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আমন্ত্রিত নেতা ছাড়া অন্য কাউকে রাখা হয়নি। এই সেশনে তৃণমূল নেতাদের কথা শোনেন খালেদা জিয়া।
সভা সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নানা কথা বলেন বিভিন্ন জেলার নেতারা। তারা বলেন, ম্যাডাম এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। তৃণমূল নেতারা সবসময় আপনার পাশে ছিল। আপনি যে নির্দেশ দেবেন আমরা ঐব্যবদ্ধ হয়ে সে নির্দেশ পালন করব। সূত্রটি আরও জানায়, বিগত আন্দোলনগুলোতে ঢাকা মহানগরের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তৃণমূলের নেতারা বলেন, ঢাকা মহানগর বিএনপিকে রাস্তায় নামতে হবে। স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় আন্দোলন করেও সফল না হওয়ার জন্য কেন্দ্র দায়ী। আগামীতে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আন্দোলনের ডাক দিলে মাঠে থাকার ওয়াদা করতে হবে।
এছাড়া তৃণমূলের নেতারা আরও বলেছেন, মফস্বল সবসময় ঐক্যব্দ্ধ। অতীতেও তার প্রমাণ দেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে একটি জেলায় ৫/১০ টা লাশ পড়ে গেলে কিছুই হয় না। কিন্তু কেন্দ্র একটু সজাগ থাকলে ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। তাই ঢাকায় আন্দোলন নিশ্চিত করতে হবে। বৈঠকে অংশ নেয়া নির্বাহী কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তৃণমূলের যারা বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন সবার বক্তব্য প্রায় একই ছিল। তারা বলেছেন, ম্যাডাম আমরা সজাগ আছি। কিন্তু কেন্দ্র কোন ভূমিকা পালন করে না। কেন্দ্রকে আরও সজাগ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বক্তারা বেগম জিয়াকে এও বলেছেন, ম্যাডাম আপনি জেলে থাকলে আমরা ঘরে বসে থাকব না।
আরেকজন নির্বাহী কমিটির সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা জানিয়েছেন, জেলা পর্যায়ের অনেকে বলেছেন, ম্যাডাম আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
তবে আন্দোলনের ফর্মুলা কেমন হবে এ বিষয়ে কোন কথা হয়নি বলেও জানান তিনি।
তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখেন। এরপর সমাপনী বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, কর্মসূচি যেটাই হোক আপনারা পালন করবেন। আমি সব হারিয়েছি। বর্তমান সংকট সমাধানে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সামনে এগিয়ে যেতে হলে আপনাদের সহযোগিতা লাগবে।
খালেদা জিয়া আরও বলেন, আমি সবার খোঁজখবর রাখি। কর্মসূচি ঘোষণার পর মাঠে না নেমে মোবাইলে যদি বলেন, ম্যাডাম আন্দোলন করেছি তাদের জন্য ভবিষ্যৎ সুখকর হবে না। ১/১১ সময় অনেকে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এবার যদি কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করেন তাহলে আর ক্ষমা করব না। আপনারা কে, কি করেন আমি সব খবর পাই জানিয়ে 'সত্য কখনো চাপা থাকে না' বলে মুচকি হেসে বক্তব্য শেষ করেন খালেদা জিয়া।
জানা গেছে, নির্বাহী কমিটির এই সভায় ৬৯৪ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মধ্যে ৪৬৭ জন সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। প্রায় ৪৭ জন নেতা দ্বিতীয় সেশনে খালেদা জিয়ার সামনে বক্তব্য রেখেছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৩০ জনই জেলা পর্যায়ের নেতা ছিলেন।
এমএম/ওআর/এআরএস