সর্বোচ্চ সতর্কতায় বিএনপি
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত রাজনীতি। গতকাল মঙ্গলবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার হাজিরা শেষে বাসায় ফেরার পথে হাইকোর্ট এলাকার সামনে পুলিশের প্রিজন ভ্যান ভেঙে ৩ নেতাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুলশান থেকে গ্রেফতার হন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
গয়েশ্বর ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া ওই দিন রাতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। যার কারণে আজ খালেদার হাজিরার সময় নেতাকর্মীদের উপস্থিত ছিল অন্যদিনের তুলনায় কম। সার্বিক পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এর আগে সোমবার রাতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপি নির্বাহী কমিটির সহ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে রমনা হোটেল থেকে আটক করে র্যাব-৩। এছাড়া আজ সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর মগবাজার থেকে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালসহ ছয়জনকে আটক করা হয়।
এদিকে রাতে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজার সামনে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে দলীয় নেতাদের ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, হাইকোর্টের সামনে যারা ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা নিজেরাই তাদের চিনতে পারছি না। অনুপ্রবেশকারীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আশঙ্কা করছি।
দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে সরকারের কড়া সমালোচনায় করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কেবল স্থায়ী কমিটির সদস্যই নয়, তিনি দীর্ঘদিন যুবদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার যুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার অবদান ছিল। তাকে এভাবে হঠাৎ তুলে নিয়ে যাওয়া অশনি সংকেত। সরকার একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য অর্থাৎ বিএনপিকে বাদ দিয়ে একদলীয় নির্বাচন করার নীলনকশার দিকে এগুচ্ছে।
এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ শত শত নেতাকর্মীর বাসায় গতরাতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মহাসচিব।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং প্রিজন ভ্যান ভেঙে নেতাদের ছিনিয়ে নেয়ার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত দু’দিনে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আটক করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে বাসা-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে রাত কাটাচ্ছন নেতাকর্মীরা। নেতারা মুঠোফোন বন্ধ রেখে বিকল্প উপায়ে যোগাযোগ করছেন।
এর প্রভাব বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাজিরার দিনেও লক্ষ্য করা গেছে। অন্যান্য বার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর শোডাউন থাকলেও আজ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল অন্য দিনের তুলনায় কম।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জাগো নিউজকে বলেন, গোটা রাষ্ট্র, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নির্বাচনের আগে সাঁড়াশি আক্রমণ বলতে যেটাকে বুঝায়, রাস্তা ঘাটে যেখানে পাচ্ছে সব জায়গা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারপরও বিএনপি যে বেঁচে আছে এটাই তো অনেক কিছু।
হঠাৎ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও বাসায় বাসায় তল্লাশির ঘটনায় বিএনপি সমর্থকদের মনোবল আরও চাঙা হয়েছে দাবি করেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম।
তিনি বলেন, ম্যাডামের হাজিরাকে কেন্দ্র করে আজ সকালে আমাদের দুশ’ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যে দিয়েও দলের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, এটা তো খুবই স্বাভাবিক, পুলিশ যেভাবে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় আছে এবং পেলেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে তো নেতাকর্মীরা একটু ভীত সন্ত্রস্ত হবেই। আজ খালেদার আদালতে যাওয়া আসার পথে গাড়িবহরে উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে আমি নিরপেক্ষভাবে বলব, উপস্থিতি কম হওয়া ভালো লক্ষণ না। পুলিশের একটু অ্যাকশনেই যদি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অর্ধেক হয়ে যায় তাহলে খালেদার বিপক্ষে রায় গেলে এ সমস্ত নেতাকর্মী কীভাবে রাজপথে আন্দোলনে নামবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এমএম/জেএইচ/আইআই