ডিএনসিসি নির্বাচন সরকারও চায়
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। গবেষণা করছেন স্থানীয় সরকারের নানা বিষয় নিয়ে। লিখেছেন নির্বাচন, সুশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে।
আদালত কর্তৃক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচন স্থগিতাদেশ, আইনি জটিলতা, নির্বাচন কমিশনের করণীয় এবং নির্বাচন-কেন্দ্রিক রাজনীতির প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। সামনের নির্বাচন ঘিরে শঙ্কার কথা উল্লেখ করলেও জনপ্রত্যাশা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু। তিন পর্বের দ্বিতীয়টি থাকছে আজ-
জাগো নিউজ : আগের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে। সমালোচনা হলেও নির্বাচন গণতান্ত্রিক ধারায় আশীর্বাদ বটে...
তোফায়েল আহমেদ : না; নির্বাচনই একমাত্র পথ নয় গণতান্ত্রিক সমাজে। গণতন্ত্র আর নির্বাচন ভিন্ন বিষয়। গণতন্ত্র হচ্ছে পরম সহিষ্ণুতা, অন্যকে জায়গা দেয়া। মানসিকতার পরিবর্তন না হলে শুধু নির্বাচন দিয়ে আপনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনের জন্য লড়াই করছে। নির্বাচন হচ্ছেও। তাতে গণতন্ত্র কী পেলো? কতিপয় আদর্শের কথা বলা হয়। এ আদর্শ না বললেও থাকে। মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তান ও ভারত ইস্যু- রাজনীতির জন্যই তৈরি করা।
জাগো নিউজ : কিন্তু এসব তো অস্বীকার করা যায় না।
তোফায়েল আহমেদ : দেখুন, মুক্তিযুদ্ধের ৪৭ বছর পর যদি কেউ মনে করে পাকিস্তান-বাংলাদেশ এক হওয়ার শঙ্কা আছে, বিষয়টি বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন ইস্যু নিয়েও তো রাজনীতি হয়।
জাগো নিউজ : কিন্তু নির্বাচনে তো প্রভাব রয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে ভারত প্রত্যক্ষ মদদ দিলো আওয়ামী লীগকে?
তোফায়েল আহমেদ : আপনি তো প্রতিবেশীকে পাল্টাতে পারবেন না। ভারত বড় ভাই হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে না। তারা কর্তৃত্ব দেখাতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মতকে অবজ্ঞা করছে বলে মনে করি।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দুর্বল থাকার কারণে ভারত এ খবরদারি করতে পারছে। জনভিত্তি না থাকায় সরকারের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। এ সুযোগ নিয়ে ভারত হস্তক্ষেপ করছে।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ বাংলাদেশে তৎপর। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ও যে তৎপর নয় তা বলা যাবে না। কলকাতায় ২০ বছর আগে ইসরায়েল মিশন খুলেছে। দিল্লিতে মিশন থাকার পরও কলকতায় যখন মিশন খোলা, তখন উদ্দেশ্য সবার কাছে পরিষ্কার।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ বড় ধরনের কূটনৈতিক বিপর্যয়ে পড়লো। বন্ধুরাষ্ট্র ভারত ও চীনের কারণেই তা হলো। ভারত-চীন ভেটো দিল। অথচ ভারত-চীনের রাষ্ট্রপ্রধান এলেই আমরা খেই হারিয়ে ফেলি।
নিজেদের দুর্বলতার কারণে আমরা অন্যের মুখাপেক্ষী হই। জন-আস্থা নেই বলেই বিদেশি হস্তক্ষেপ আবশ্যক হয়।
জাগো নিউজ : বলছিলেন, ডিএনসিসি নির্বাচনের কথা...
তোফায়েল আহমেদ : সবার মাঝে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, অবিশ্বাস ছিল। আমি মনে করি, এ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা ফুরিয়ে যায়নি। আদালতের মাধ্যমেই এর সমাধান হবে।
জাগো নিউজ : আদালতে এতো ভরসা পাচ্ছেন কেন? অনেক গুরুত্বপূর্ণ রিটও খারিজ করে দেন আদালত। অথচ এটি আমলে নিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা হলো...
তোফায়েল আহমেদ : শেষ পর্যন্ত হলেও আদালতের ওপর আস্থা রাখতে চাই। নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা তো দেখতে হবে। আগেই তো আদালতের ওপর আস্থা হারানো ঠিক হবে না।
জাগো নিউজ : মানুষ কী আস্থা পায়?
তোফায়েল আহমেদ : মানুষ নিজের চিন্তা প্রকাশ করে। আমি আস্থা রাখার পক্ষে। রাষ্ট্র, সমাজ নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা করছি না কেন?
জাগো নিউজ : এর জন্য তো রাষ্ট্রই দায়ী?
তোফায়েল আহমেদ : বাঘ আতঙ্ক ঘিরে থাকলে সত্যিই যদি বাঘ আসে তাহলে রক্ষা হবে না!
জাগো নিউজ : আপনার কি মনে হয়, সত্যি বাঘ আসেনি?
তোফায়েল আহমেদ : এরপরও তো আস্থা রেখে বেঁচে থাকতে হয়। আদালত কী সিদ্ধান্ত দেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ডিএনসিসি নির্বাচন সরকারও চায়। এমন একটি নির্বাচন হলে সরকারের বড় ক্ষতি হবে- আমি তা বিশ্বাস করি না। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সরকারের দায়িত্ব। যদিও মিথ্যার রাজনীতি সবকিছু গ্রাস করছে।
জাগো নিউজ : তাহলে ভরসা পাচ্ছেন কোথায়?
তোফায়েল আহমেদ : নির্বাচন সরকারের বা রাজনীতিবিদদের দয়া নয়। আইনের বিধানে নির্বাচন হতে বাধ্য। আদালত ও জনগণ যদি শক্তভাবে দাঁড়ায় নির্বাচন হবেই।
জাগো নিউজ : জনগণ দাঁড়াচ্ছে কই?
তোফায়েল আহমেদ : একটি নির্বাচন সরকার যেনতেনভাবে পার করেছে বলে সবই একই ধারায় পার করবে- এটি আমি অন্তত মনে করি না। আদালতের নির্দেশ সরকার কীভাবে অনুসরণ করে তা দেখতে হবে।
এএসএস/এমএআর/আইআই