প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও অন্ধকারে ছাত্রদল
বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ জানুয়ারি (সোমবার)। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের বিষয়ে গুটি কয়েক নেতা ছাড়া অনেকের কাছেই কোনো খবর নেই।
এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতৃত্বেই এবারও সংগঠনের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে বিগত বছরের ন্যায় এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে ঘিরে তেমন উচ্ছ্বাস নেই নেতাকর্মীদের।
ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রথম প্রহরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কেক কাটবেন না খালেদা জিয়া। এমনকি সংগঠনের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের কোনো আয়োজন নেই।
সংগঠনের সভাপতি রাজিব আহসান জানিয়েছেন, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এবার দলীয় প্রধান কেক নাও কাটতে পারেন। তবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ১ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় দলের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া ২ জানুয়ারি রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ছাত্র সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সূত্র মতে, বর্ণিল আয়োজনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে প্রতি বছর বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন করা হয়। তবে এ বছর কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। এমনকি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো ধরনের কর্মসূচি আছে কি-না তাও জানেন না কেন্দ্রীয় অনেক নেতা।
ছাত্রদলের শীর্ষ এক নেতা জানান, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। তাই পুলিশ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করার কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ধুমধাম করে পালন থেকে পিছু হঠেছেন তারা।
ছাত্রদলের প্রথম সারির কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান কমিটি ইতোমধ্যে মেয়াদ শেষ করেছে। ফলে অনেকের আস্থায় চিড় ধরেছে। তাই চাইলেও সেভাবে আয়োজন করতে পারছি না।
তিনি আরও জানান, দলের সংকটময় মুহূর্তে ছাত্রদলকে আরও গতিশীল করতে নতুন কমিটির বিকল্প নেই। সব ষড়যন্ত্রের উর্ধ্বে এসে শিগগিরই নতুন কমিটি না হলে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের যে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে তা ভেস্তে যেতে পারে।
২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ৭৩৬ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
বর্তমানে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কারাগারে রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন সংগঠনটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
এদিকে সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ দুই বছর হলেও বর্তমান কমিটি মেয়াদ শেষে করেছে। এদিকে নতুন কমিটি গঠনে কার্যত কোনো তৎপরতা দেখা না গেলেও হঠাৎ করেই নতুন কমিটি ঘোষণার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
নতুন কমিটির শীর্ষ পদ পেতে গত এক বছর ধরে অনেকেই তদবির অব্যাহত রেখেছেন। নতুন কমিটিতে পদ পেতে দুধের মাছিদেরও তৎপতরা বেশ লক্ষণীয়। তবে নতুন কমিটির শীর্ষ পদের তালিকায় রয়েছেন নির্ভরযোগ্যদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন নেতা। তারা হলেন- ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, নাজমুল হাসান, আলমগীর হাসান সোহান, মামুন বিল্লাহ, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, ইখতিয়ার রহমান কবির, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, যুগ্ম সম্পাদক মিয়া মো. রাসেল, আবদুর রহিম হাওলাদার সেতু, মিজানুর রহমান সোহাগ, নুরুল হুদা বাবু, কাজী মোকতার হোসেন, মেহবুব মাসুম শান্ত, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, ক্রিয়া সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ প্রমুখ।
এছাড়াও বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে সদস্য পদ পাওয়া ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুনের অনুসারীরাও এ দুই নেতাকে নতুন কমিটির শীর্ষ পদে প্রত্যাশা করছেন।
ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার কথা:
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখন তিনি ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরির জন্য একটি ছাত্রসংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাই ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয়ভাবে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তখনকার সময়ে জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তার জন্য অনেক তরুণ অনুপ্রাণিত হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদান করেন। বর্তমানে যারা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত, তাদের অনেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যুক্ত ছিলেন।
এমএম/এএইচ/এমআরএম