ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

শিলংয়ে বসে বিএনপিকে চাঙ্গা করছেন সালাহউদ্দিন!

প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ১২ জুলাই ২০১৫

ভারতের শিলংয়ে অবস্থানরত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ সেখান থেকেই কাজ করছেন দলের জন্য।  তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে। বিএনপিতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও ভূমিকা রাখছেন তিনি।  একই সঙ্গে তার নিজ জেলা কক্সবাজারের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দল পরিচালনায় যাবতীয় দিক-নির্দেশনাও দিচ্ছেন।

ইতোমধ্যেই দলে সকল ভেদাভেদ ভুলে শাহজাহান চৌধুরী ও লুৎফুর রহমান কাজলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার বার্তা পাঠিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। আর এসব নেতাও দল পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সালাহউদ্দিন আহমদের দিক-নির্দেশনা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রেস সচিব সাফওয়ানুল করিমের মোবাইলসহ আরো কয়েকজন বিশ্বস্থ ব্যক্তির ফোন থেকে কথা বলেন। কক্সবাজার জেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এবং সালাহউদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ট সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।

এছাড়া সালাহউদ্দিন আহমদ রহস্যজনক সেই ‘৬২ দিন’ সম্পর্কে একান্ত আপনজন ছাড়া কাউকে কিছু বলেন নি। তবে সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, ৬২ দিন আটক থাকা অবস্থায় এক মুহুর্তের জন্যও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েননি তিনি। মনোবল ছিল শক্ত। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মানসিক ভারসাম্যও হারাননি। রাজনীতি করলে এমন পরিস্থিতি হতেই পারে তা মেনে নিয়েছিলেন তিনি।

যারাই তার রহস্যময় সেই ‘৬২ দিন’ সম্পর্কে তার কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন, তাদেরকে বলেছেন ‘৬২ দিন’ সম্পর্কে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। সেই দিনগুলোর বিষয়ে জিজ্ঞেস না করে তার সুস্থতার জন্য দোয়া করার অনুরোধ করেন।

সূত্র জানায়, ভারতের শিলংয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের শর্ত সাপেক্ষে জামিনের পর তার ভাড়া নেয়া কটেজে তাকে দেখতে যান কক্সবাজারের একাধিক নেতাকর্মী। ঢাকা থেকেও গিয়েছেন অনেকে। তবে সিংহ ভাগই ফোন করে তার খোঁজ খবর রাখছেন। বর্তমানে সেখানে তার সাথে অবস্থান করছেন, তার মন্ত্রিত্বকালীন সময়ের নিজস্ব আলোকচিত্রী কক্সবাজারের সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হেলালী।

সম্প্রতি শিলংয়ে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদকে ৪দিন একান্তে সময় দিয়ে এসেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নিবার্হী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল।

তিনি জানান, শিলংয়ে যে কটেজে সালাহউদ্দিন আহমদ অবস্থান করছেন সেখানে যাওয়ার পর তাকে দীর্ঘক্ষণ জড়িয়ে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীকে কাছে পেয়ে তারা দু’জনেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ৪ দিন ধরে সালাহউদ্দিন আহমদের পাশে অবস্থানকালে তাকে স্বাভাবিক দেখা গেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এসময় তার কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। তার মনোবল অত্যন্ত দৃঢ় দেখা গেছে।  বরং তিনি বলেছেন, রাজনীতি করলে এসব মেনে নিতে হবে।

তবে দীর্ঘদিন বন্দি থাকায় তার পায়ে চর্মরোগের লক্ষণ দেখা গেছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা কাজল বলেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার।

সালাহউদ্দিন আহমদ সম্পর্কে জানতে চাইলে লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, তিনি মানসিকভাবে শক্ত আছেন, দলের জন্য কাজ করছেন-চিন্তা করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাও দিচ্ছেন। সবার সাথে যোগাযোগও রাখছেন তিনি। অসুস্থ হওয়ায় তার জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে কাজল বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদ অনেক বড় নেতা, বিচক্ষণ নেতা, এ সরকারের আমলে সবচেয়ে নির্যাতিত নেতাও তিনি।  রাজনীতিতে তার মতো নেতার বিকল্প নেই।

সালাহউদ্দিন আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে লুৎফুর রহমান কাজল আরো জানান, রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে যে পোশাকে তাকে ধরে নেয়া হয়েছিল, সেই পোশাকেই ৬২ দিন পর তাকে ভারতের শিলংয়ে ফেলা দেয়া হয়। ভোর রাতে তাকে ফেলে দেয়ার পর তিনি উদভ্রান্তের মতো হাঁটতে থাকেন। কিছু দূর যাওয়ার পর তিনি কয়েকটি দোকানের সামনে সাইনবোর্ড দেখতে পান। সাইনবোর্ড পড়েই তিনি বুঝতে পারেন তাকে শিলংয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় তিনি দোকানের সামনে থাকা বেঞ্চে গিয়ে কিছুক্ষণ বসেন। এসময় কিছু দূরে দু’জন পুলিশকে হাঁটতে দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন আইনের আশ্রয় নেয়ার। পরে পুলিশের কাছে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রতিমন্ত্রী ছিলাম, সেদেশের বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমি। আমাকে দুই মাস আগে সে দেশের রাজধানী থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। কিছুক্ষণ আগে অপহরণকারীরা আমাকে এখানে ফেলে যায়। এসব কথা বলার পর ওই দু’ পুলিশ সদস্য তার কথা বিশ্বাস করতে পারেননি। তারা তাকে পাগল ভেবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহায়তায় শিলংয়ের মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার নখ, দাড়ি, গোঁফ, চুল কেটে দেয়া হয়। সেখানে তিনি তার পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইল বা ল্যান্ড ফোনের সহযোগিতা চান। এমনকি তার পরিবারের সাথে একটু যোগাযোগের জন্য এক মিনিট ফোন কলের জন্য ‘লাখ রুপি’র অফার দেন তিনি।  যার কারণে সত্যি সত্যি তাকে পাগল ভাবেন সংশ্লিষ্টরা। ফলশ্রুতিতে হাসপাতালে খেতে না চাইলেও তাকে এক প্রকার জোর করে মানসিক রোগের ওষুধ খাওয়ানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি মানসিকভাবে সুস্থ আছেন বলে প্রমাণিত হলে তাকে মানসিক হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।

কক্সবাজারের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, সালাহউদ্দিন আহমদ প্রায় প্রতিদিন কক্সবাজারের বিভিন্নস্থরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পালা করে কথা বলেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের জন্য কাজ করতে বলেছেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, আইনী জটিলতা কাটিয়ে তিনি দেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া উন্নত চিকিৎসার আগ্রহও প্রকাশ করেন তিনি।

বর্তমানে সালাহউদ্দিন আহমদ শিলংয়ে নিয়মিত নামাজ পড়ে, কোরআন তেলোয়াত করে, বই পড়ে এবং গল্প গুজব করেই সময় কাটাচ্ছেন জানিয়ে কাজল বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদকে মন্ত্রী থাকাকালীন সময় থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কাযা করতে কখনো দেখিনি।

দলীয় কর্মকাণ্ডের বিষয়ে লুৎফুর রহমান কাজল জানান, সালাহউদ্দিন আহমদ অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনগুলো ঢেলে সাজাতে বলেছেন। তার নির্বাচনী এলাকার কমিটিগুলো তিনি সরাসরি মনিটরিং করছেন। এছাড়া কক্সবাজারের নেতাকর্মীদেরও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার (কাজলের) সাথে পরামর্শ করে দল পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, সালাহউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন। আর জরুরী প্রয়োজনে আমরাও তার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দল পরিচালনা করতে বলেছেন। একই সাথে তিনি সবার দোয়াও চেয়েছেন।

এমএএস/আরআই