ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

ভুলে ভরা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র

প্রকাশিত: ০৮:২৪ এএম, ০৭ জুলাই ২০১৫

৩৬ বছরের পুরনো ভুল বানানের খসড়া গঠনতন্ত্র দিয়েই চলছে বিএনপির শক্তিশালী অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এ গঠনতন্ত্র যেমন সেকালের তেমনই রইয়েছ ভুল বানানের মহোৎসবের চিত্র। যা বছরের পর বছর থাকলেও কেউ এর সংশোধনের উদ্যোগ নেয়নি। জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার পর সর্বশেষ খসড়া গঠনতন্ত্র ১৯৯৯ সালের ৫ এপ্রিল সংশোধন করা হয়েছিল। এরপরও গণতন্ত্র সংশোধনের দিকে নজর দেননি ছাত্রদলের কেউ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছাত্রদলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গঠনতন্ত্রের বানান ভুলের চিত্র দেখলে যেকোনো সংগঠনের সংগঠকদের ভ্রু কুচকে উঠবে। এ গঠনতন্ত্রে দেখা যায় শতাধিক বানান ভুল। এ ভুল বানানের তালিকায় বেশিরভাগই ণত্ব ও ষ-ত্ব বিধান সম্পর্কিত। এ ভুল বানানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ‘সাধারণ’। এর পরে রয়েছে ‘আহ্বায়ক’। এছাড়া এ গঠনতন্ত্রে রয়েছে অসংখ্য অসম্পূর্ণ আর ভাঙা শব্দ।

তবে অবাক করার বিষয় হলো বেগম খালেদা জিয়ার শাসনকালে ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হলেও এ গঠনতন্ত্রে ঢাকার দ্বিতীয় রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়টি কলেজই রয়ে গেছে ।

ছাত্রদলের ওয়েবসাইটের গঠনতন্ত্রে ‘অনুচ্ছেদ:১। সংগঠনের নামকরণ’ এর প্রথম লাইনে ভুল বানানের দেখা মেলে। সেখানে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের আশা আকাংখার প্রতীক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউরে রহমান প্রবর্তিত একমাত্র রাষ্ট্রীয় দর্শন ‘‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’’ বহুদলীয় গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় বিচার ভিত্তিক শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, উৎপাদন মুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রনয়নের সহায়ক শক্তি হিসাবে এই সংগঠনের নাম ‘ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।’

এ লাইনে বোল্ড ইতালিক অক্ষরে লেখা তিনটি শব্দের বানান ভুলের চিত্র প্রথমেই প্রত্যক্ষ করেছে নেতাকর্মীরা। এতে করে নতুন এ ভাবাদর্শে আসবে তারা আরো দূরে সরে যায়। তারা মনে করেন, এ ভুলের গঠনতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে যে দল গড়ে উঠেছে তার ভবিষ্যৎ ভালো নয় এটি অনুমেয়। উপর্যুক্ত তিনটি শব্দের প্রকৃত বানান হবে ‘আকাঙ্ক্ষা’, ‘প্রণয়নের’ ও ‘শোষণহীন’।

ছাত্রদলের গঠরতন্ত্রের ‘অনুচ্ছেদ:২। মুলনীতি’তে দেখা যায় বেশ কয়েকটি শব্দের বানানের ভুল।  ছাত্রদলের তিনটি মূলনীতির প্রথম নীতি ‘শিক্ষা’য় মেরুদণ্ড বানানটি ভুল রয়েছে। সেখালে লেখা রয়েছে, ‘শিক্ষাঃ শিক্ষাকে কেন্দ্র করেই ছাত্র জীবনের সূচনা। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’।’ এখানে বোল্ড ইতালিক ‘মেরুদন্ড’ এর প্রকৃত বানান হবে ‘মেরুদণ্ড’। অপর মূলনীতি ‘ঐক্য’ ও ‘প্রগতি’ দুটো ভুল বানান যথাক্রমে ‘পরিনত’ ও ‘প্রগতর’ দেখতে পাওয়া যায়। বোল্ড ইতালিক উক্ত বানান দুটো হবে ‘পরিণত’ ও ‘প্রগতির’ ।

সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো কার্যালয়। ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের ‘অনুচ্ছেদ: ৩। কার্য্যালয়’ দেখতে পাওয়া যায়। এখানে ইতালিক বোল্ড হরফে লেখা শব্দটি বানান যে ভুল যেকোনো পাঠক তা ধরতে পারবেন । এ ‘কার্য্যালয়’ এর প্রকৃত বানান টি হবে ‘কার্যালয়’। এ অনুচ্ছেদে এ কার্যালয়টি দু’বার ভুল বানালে লেখা দেখতে পাওয়া গেছে।

এ সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ‘অনুচ্ছেদ:৪। পতাকা’ য় দুটো ভুল বানান ‘ত্রিশলাখ’ ও ‘তারুন্যের’ দেখতে পাওয়া যায়। এ ভুল বানানের প্রকৃত বানান হলো যথাক্রমে ‘ত্রিশ লাখ’ ও ‘তারুণ্যের’। এ গঠনতন্ত্রের ‘অনুচ্ছেদঃ ৫। শপথ’ এ ‘‘সম্প্রসারনবাদ”  ভুল বানান চোখে পড়ে। প্রকৃত বানান হবে ‘সম্প্রসারণবাদ’।

গঠনতন্ত্রের ৬:১ অনুচ্ছেদের আদর্শের, ঘোষণা, নির্বাহী সাধারণ, গণ্য ও গ্রহণকালীন শব্দগুলোর বানান ভুল দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত শব্দগুলোর বানান এ অনুচ্ছেদ দেখতে পাওয়া যায় যথাক্রমে ‘আদশ্যের’, ‘ঘোষনা’, ‘র্বিাহী’, ‘সাধারন’, ‘গন্য’ ও ‘গ্রহণকালীন (অনুচ্ছেদ ৬:১,ক)’। অনুচ্ছেদ৬:২ এ  শৃঙ্খলা বানানটি লেখা আছে ‘শৃংখলা’।

অনুচ্ছেদ:৭ এ আহ্বায়ক শব্দটির প্রথম ভুল বানান দিয়ে শুরু হয়েছে। পরে বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে এ বানান ভুল দেখতে পাওয়া যায়। এ অনুচ্ছেদে আহ্বায়ক বানানটি লেখা আছে‘আহবায়ক’। অনুচ্ছেদ:৮ এ  সাধারণ বানান তিনবার, আহ্বায়ক দুবার ভুল বানানে লেখা আছে। যা চিত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ: ১০ এ সাধারণ ও আহ্বায়ক দুটি করে চারটি এবং অনুরূপ ভুল বানানে লেখা আছে ।

এ ছাত্র সংগঠনের গঠনতন্ত্রে সবচেয়ে বড় ভুল না, অসংশোধন তা জানা না গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নামে ছাত্রদলের কোনো নাম পাওয়া যায়নি। অথচ বাস্তবে এ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি আছে। এ সংগঠনের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ: ১৩। জেলা শাখা রুপ কেমন হবে সেখানে অনুচ্ছেদ: ১৩ । জেলা শাখা, (ক) তে সম্পর্কের নির্দেশনায় এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘(ক) প্রতিটি প্রশাসনিক জেলা ও জেলা কমিটির মর্যাদা প্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ, প্রতিটি মহানগরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সৈয়দপুর জেলা শাখা হিসাবে বিবেচিত হবে। অথচ এ সংগঠনের প্রধান নীতি-নির্ধারক বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শাসনকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। শুধু তাই নয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি এ চেয়ারপারসন অনুমোদন করে থাকেন।

এ অনুচ্ছেদের খ) ১ও ২। ধারা দেখতে পাওয়া যায় বানান ভুলের মহাড়া। এখানে আহ্বায়ক চারবার, সাধারণ দু’বার ভুল বানানে লেখা আছে। আবার সভাপতির বানানে সভঅপতি (খ)২।)

অনুচ্ছেদ:১ ৪ শুরু হয়েছে ভুল বানান দিয়ে। ভেতরে ভুলের পরিমাণ প্রথমেই অনুমেয়। এখানে দেখতে পাওয়া যায়, ‘অনুচ্ছেদ:১৪। ‘আহবায়ক’ কমিটি। প্রকৃত বানানটি হবে ‘অনুচ্ছেদ:১৪। ‘আহ্বায়ক’ কমিটি। এ অনুচ্ছেদের উপধারা চারটি উপধারায় ছয়বার আহ্বায়ক ভুল বানানে লেখা। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ, কারণ বানানদ্বয়ও ভুল রয়েছে।

এভাবে অনুচ্ছেদ: ১৫, অনুচ্ছেদ: ১৬, অনুচ্ছেদ: ১৮, অনুচ্ছেদ: ১৯, অনুচ্ছেদ: ২০, অনুচ্ছেদ: ২২, অনুচ্ছেদ: ২৩, অনুচ্ছেদ: ২৪, অনুচ্ছেদ: ২৫, অনুচ্ছেদ: ২৬, অনুচ্ছেদ: ২৭, অনুচ্ছেদ: ২৮, অনুচ্ছেদ: ২৯, অনুচ্ছেদ: ৩০, অনুচ্ছেদ: ৩১ গুলো সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক বানান ভুলের পাপাপাশি এ গঠনতন্ত্রে কারণ, রক্ষণাবেক্ষণ, মণ্ডলী, প্রকাশনা ঊর্ধ্বতন, শহীদ সংশোধনের বানানে ভুল রয়েছে। আর এ গঠনতন্ত্র এখনো যে খসড়া পর্যায়ে রয়ে গেছে তার প্রমাণ মেলে উক্ত গঠনতন্ত্রের শেষ অনুচ্ছেদের পর বিশেষ দ্রষ্টব্য লেখায়।

সেখানে বলা আছে, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে র বর্তমান খসড়া গঠনতন্ত্র মুদ্রিত আছে। ভুল বানানে পরেই লাইনে বলা হয়েছে, গঠনতন্ত্রের সংশোধন অত্যান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় সংসদের পুর্নাঙ্গ সভার নিদ্ধান্তনুযায়ী সংবিধান প্রণয়নের জন্য সংশোধনী কমিটির মাধ্যমে স্থায়ী কমিটি দলীয় চেয়ারপার্সনের অনুমতিক্রমে সংশোধীত আকারে জাতীয় কাউন্সিলেলর কাছে উপস্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে । ’

এছাড়াও তাদের ওয়েবসাইট যে অকার্যকর তা সাইট ওপেন করার সঙ্গে সঙ্গেই টের পান একজন ভিসিটর।

ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র ও ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক আব্দুস সত্তার পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের মিথ্যা মামলায় আমি চার মাস জেলে ছিলাম। তাই ওয়েবসাইট আপডেট করা হয় না।

গঠনতন্ত্রের কী আপডেট করার আছে তা জানতে চাইলে বলেন, আমাদের গঠতন্ত্র এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে বানান ভুলের ব্যাপারটি অত্যান্ত দুঃখজনক। আশা করি শিগগিরই এসব ভুলগুলো সংশোধন করা হবে।

এসএম/বিএ/পিআর