৫ মাসেই শেষ হচ্ছে আ.লীগের প্রধান কার্যালয়ের নির্মাণকাজ
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী পাঁচ মাসের মধ্যেই শেষ হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের মূল কাজ। ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধনের কথা রয়েছে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ প্রধান কার্যালয়ের নতুন ভবনটি।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে চলতি বছরের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই পুরনো ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে নতুন ভবনের মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হবে। মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হলেই ভেতরের সাজসজ্জার কাজ শুরু হবে। বর্তমানে প্রতিদিন ৪২ জন শ্রমিক ভবনটি নির্মাণে কাজ করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত পুরনো কার্যালয়ের স্থানে মাটির নিচের এক তলাসহ ১০ তলা নতুন ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এরই মধ্যে ৯ তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও এক তলার কাজ শেষ হবে। এরপর ভবনের ভেতরের অন্যান্য কাজ শুরু হবে।
ভবন নির্মাণে সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কমফোর্ট নামের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণের কাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফোরম্যানের দায়িত্বে থাকা মো. ইসমাইলের সঙ্গে কথা হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে। তিনি বলেন, ৯ তলার অর্ধেক ও দশ তলার ছাদের কাজ বাকি। আগামী দুই মাসের মধ্যে এটা শেষ হবে। এরপর ভেতরে পার্টিশন দেয়াল, ইলেক্ট্রিক লাইন, স্যানিটারি ও রঙের কাজ শুরু হবে। আশা করি আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
ইসমাইল জানান, ভবনের টাইলস, লিফট ও ডেকোরেশনের কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়নি। মূল ভবনের কাজ শেষ হলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাজ-সজ্জা সংক্রান্ত কাজগুলো করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বিশ্বমানের ভবনটির সামনের দু'পাশের দেয়াল কাচ দিয়ে ঘেরা থাকবে। আর মাঝখানে সিরামিকের ইটের বন্ধনে গড়ে উঠবে। সামনের দেয়ালজুড়ে সাইনবোর্ডসহ দলীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, চার মূলনীতি, ভাষা আন্দোলন '৫২, মুক্তিযুদ্ধ '৭১ প্রভৃতি শব্দ খোদাই করে লেখা থাকবে। ভবনের সামনে পেছনে হবে ফুলের বাগান।
ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানের ছবি রাখারও পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, ১০ তলা বিশিষ্ট এ ভবনে চার ও পাঁচ তলায় থাকবে আওয়ামী লীগের সহযোগী-অঙ্গসংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয়। সাত, আট ও ৯ তলায় দলীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কক্ষ থাকবে।
ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকবে ডিজিটাল লাইব্রেরি, সেমিনার রুম এবং সাংবাদিক লাউঞ্জ। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিতব্য ভবনটিতে থাকবে দুটি স্বতন্ত্র কার পার্কিং, একাধিক লিফট, সিঁড়ি, কারলিফটসহ ভূমিকম্প ও অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। ভবনের ছাদে থাকবে হেলিপ্যাড।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের পুরনো অফিস ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের চারতলা ভবনটি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে লিজ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সে সময় তা অসমাপ্ত থেকে যায়। পরে বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে ওই লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পাশে আরও কিছু জায়গাও দলীয় ফান্ড থেকে কেনা হয়।
লিজ ও জমি ক্রয় প্রক্রিয়া শেষে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। পরে নকশা প্রস্তুত ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদনের পর এখন বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। ১৯৫৩ সাল থেকে ৯ কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করা হতো।
১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬, সিমসন রোডে দলের অফিস করা হয়। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন।
এর কিছুদিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছু দিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর ১২২, সার্কিট হাউস রোডে কিছুদিনের জন্য আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। পরে আবারও পুরান ঢাকার নবাবপুরে অফিস স্থানান্তর হয়।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর বর্তমান অফিসটি ভাড়া নেয়া হয়।
এইউএ/এএইচ/আইআই