রাজনৈতিক কারণে রোহিঙ্গাদের পাশে সরকার
রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবতা বা নৈতিক কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে সরকার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তখন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের হলরুমে ‘রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম নামের একটি সংগঠন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থা অস্পষ্ট দাবি করে আমীর খসরু বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপত্তার প্রশ্ন। সুতরাং রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের অবস্থান আমি মনে করি পরিষ্কার নয়।’
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুর শুরুতে যখন মানবেতর অবস্থায়, তখন পুশব্যাক করা হলো। তখন এটাই ছিল বাংলাদেশের অফিসিয়াল অবস্থান। তখন রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী বলা হলো, কেউ কেউ মাদক পাচারকারী বলল। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যখন আসছেন, ত্রাণ আসছে, বিশ্ব জাগ্রত বিবেকবান মানুষের অবস্থান যখন পরিষ্কার, তারা যখন জাতি নিধন এবং এটা গণহত্যা বলা শুরু করল। দেশের সব মানুষ যখন মানবতার পক্ষে, দেশ ও দেশের বাইরের চাপ শুরু হলো, তখন সরকারের সুরে পরিবর্তন এসেছে।’
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারছেন না রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে হবে কিনা? যদি রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবস্থান নিয়ে থাকেন তবে এর ফল শুভ হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলের দেশগুলোর অবস্থান দেখেছি। সব দেশই নৈতিকতার দিক থেকে হেরে গেছে। যারা সু চির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তারা হেরে গেছে। তারা একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তাকে উস্কে দিচ্ছে। একটি জাতিকে স্টেটলেস করলে, সেই জাতির ভয় চলে যায়। সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক লাভের চিন্তা দূরে থাক, নিরাপত্তার জন্য ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে। এজন্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপি রাজনীতি করছে আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন সমালোচনারও জবাব দেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু একটি বড় রাজনৈতিক বিষয়, এটা নিয়ে রাজনীতি হবেই। এই ইস্যুতে মতামত প্রকাশ করবে, বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান করবে এটাই স্বাভাবিক উগ্র জাতীয়তাবাদ দেখা দিয়েছে এই অঞ্চলে, যা ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতিতে ফেলছে এই অঞ্চলকে। এটা আওয়ামী লীগ বিএনপির বিষয় নয়, এটা জাতীয় ইস্যু। আমরা বারবার সহযোগিতার কথা বলে আসছি, কিন্তু কী সহযোগিতা করব। আমাদের ত্রাণ দিতে দেয়া হচ্ছে না।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘ত্রাণ দেয়া বন্ধ করতে পারবেন, কিন্তু জনগণকে ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখতে পারবেন না। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুকোমল বড়ুয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমত উল্লাহ,খালেদা ইয়াসমিন প্রমুখ।
এমএম/জেএইচ/আরআইপি