‘পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের সুরে ষোড়শ সংশোধনীর রায়’
সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিটে হাইকোর্টের রায় এবং অ্যাপিলেট ডিভিশনে খারিজ আদেশে শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, আইনি নজীর প্রদানে এমন সব ভাব-ভাবনার প্রকাশ পেয়েছে, যা পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের সুরের প্রতিধ্বনি।’
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় পাশে বসে ছিলেন তার স্ত্রী লাইলা সিদ্দিকী।
হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এবং মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ হারানো লতিফ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘পাকিস্তানি রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে যারাই জ্ঞাত তাদের সবাই জানে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের এই ধরনের রায়ের পেছনের মদদদাতা ও শক্তির উৎস জনগণ, সংবিধান কিংবা আইন নয়; দেশটির ক্যান্টনমেন্ট।’
সংবাদ সম্মেলনে লফিত সিদ্দিকী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার যা বলার আমি লিখিত বক্তব্যে বলেছি। আমি জানি কার মদদে এই রায় এবং কে লিখেছেন। কিন্তু আমি এখানে তা বলব না।’
তিনি বলেন, রায়ে বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক বহুবার বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে উচ্চ আদালতের কর্মকাণ্ড ষড়যন্ত্র কি না, তা ইতিহাসের গবেষণার বিষয় হলেও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের একটি বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রায়। ব্যাপারটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সঠিক কৌশল নিলেও অন্যরা ষড়যন্ত্রকে উস্কে দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে যেসব মতামত দেয়া হচ্ছে তা ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ উল্লেখ করে লফিত সিদ্দিকী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেয়ার ধূম পড়েছে। এই পক্ষে-বিপক্ষে, ভালো-মন্দ, এর ঠিক-বেঠিক দেশের ও মানুষের নিরিখে নয়। পুরোটাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলেই বিবেচিত।
‘ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টে, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও মতামত ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুবিরোধী শক্তি যত বিরূপ কদর্য মন্তব্য করেছে তার চেয়েও অপকৃষ্ট বলে অনেকেই ক্ষুব্ধ’ বলেও মন্তব্য করেন লতিফ সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘চরম ও পরম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যখন উদ্দেশ্যহীন ও লুটেরার গণিমতের মালে রূপ নিচ্ছে তখন তিনি (বঙ্গবন্ধু) চতুর্থ সংশোধনীর পথে হাঁটেন। নেতার এটা দায়বদ্ধতা। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ওই জায়গাগুলোকে আঘাত করছে বলে ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিকৃত প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।’
সাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে কাত করার অস্ত্র কী- এটি ভেবে দেখার দরকার উল্লেখ করে লতিফ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী কোনো বিষয় নয়, আমার ধারণা বিষয়টি অন্য কোথাও আড়াল করে রাখা হয়েছে। আমরা দূর থেকে হাত-পা ছুড়ছি, কিন্তু আসল বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি না। ব্যাপারটা কী এমন- মানুষ হত্যা, যানবাহন পোড়ানো, ককটেল-বোমা ফোটানো, বৃক্ষনিধন, নির্বাচন বর্জন, সড়ক অবরোধ, পুলিশ হত্যা, জেএমবি জঙ্গিবাদ ও হলি আর্টিজন হত্যা-তাণ্ডব করে কিছু হলো না, অসাংবিধানিক শক্তিকেও ব্যবহারের সুযোগ কমে গেছে। বারবার ব্যবহার করে অস্ত্রটি ভোঁতা হয়ে গেছে। তাই সাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে কাত করা; বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।’
‘বিচারপতি ও বিজ্ঞ আইনবেত্তাদের জনস্বার্থে অবদান রাখার কোনো নজির নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বিচারপতি আবদুস সাত্তার, বিচারপতি সায়েম, বিচারপতি আহসান উল্লাহ, বিচারপতি মুনীর, বিচারপতি সাহাবুদ্দিন, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, বিচারপতি লতিফুর রহমান কারও ভূমিকাই জনস্বার্থে বা ন্যায়নীতির পক্ষে নয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান আইনবেত্তাদের ভূমিকাও কি খুব উজ্জ্বল? ভুল-শুদ্ধ যাই হোক রাজনীতিকরাই দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করেন।
তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্যরা অপরিপক্ক বলায় গণমানুষের মানবিক অধিকারই শুধু নয়, মর্যাদার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শিত হয়েছে। সংবিধান রাষ্ট্রের বেতনভোগী কাউকে এমন অবজ্ঞা প্রদর্শনের অধিকার দেয়নি। রাষ্ট্র, সংবিধান সবকিছুর মালিক নাগরিক। সংসদ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। সর্বোচ্চ আদালত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত, সংবিধান স্থগিত, জংলি আইন বলবতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দৃঢ়তা-বিচক্ষণতা দেখায়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের উচ্চ আদালত তার অভিভাকত্বের অধিকার ও মর্যাদা নিজেদের ভীরুতা ও সুবিধাবাদী আচরণ দ্বারা খুঁয়ে বসেছে।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই সংসদ সদস্যরা সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত নন, পরিশ্রমী নন। সংবিধান সংশোধনে মনোযোগ দেন না। এসব কথা দিবালোকের মতোই সত্য। সংসদ নেতা এবং তাকে বৃত্ত করে কিছু খেকশিয়াল মতলব আঁটে তাও সত্য। পুনরায় বলি, দেশের খ্যাতিমান ও প্রাজ্ঞ আইনজীবীরাই আইনি-মারপ্যাচে দুষ্টের অপরাধ মোচনে সাওয়াল করেন। তারাই জংলি আইনের পক্ষে ওকালতি করেন। সেই তারাই যখন সংসদকে ও তার সদস্যদের মূর্খ বলেন তখন আপামর জনগণকেই তা বলা হয়।
এমএএস/এমএআর//আইআই