ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ১৪ দলের প্রত্যাখ্যান
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের যে রায় দিয়েছেন তা অপ্রাসঙ্গিক, অগ্রহণযোগ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। সেই সঙ্গে তারা রায়কে আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন নেতারা।
এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বৈধ সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রায়ে যে পর্যবেক্ষণ রয়েছে তা ১৪ দল প্রত্যাখ্যান করছি। সেই সঙ্গে এ রায় বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। বাতিল করতে হবে। আমরা এটা আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে দেশের মানুষ জানে। বঙ্গবন্ধু যে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা চন্দ্র-সূর্যের মতোই সত্যি। এটা নিয়ে রায়ে যা বলা হয়েছে তা জনগণ মেনে নেবে না, ক্ষমা করবে না। সুতরাং এ রায়ের পুনর্বিবেচনা জরুরি’।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘এ রায়ে সংসদকে অবমাননা করা হয়েছে। আমি জানি না মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রধান বিচারপতি কোথায় ছিলেন। আসলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তিনি জানেন না বলেই দুঃসাহস দেখিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত যেন চক্রান্ত করতে পারে সে সুযোগ করে দিয়েছেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন এ রায় নিয়ে রাজনীতি করা অনুচিত। কিন্তু দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে রায়ে কথা বলা হয়েছে তা উপেক্ষা করে থাকা অনুচিত কি না। সুতরাং আমরা কোন বোধ নিয়ে এগোবো তা নিয়ে ভাবতে হবে’।
জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এ রায়ে শুধু ১৪ দল নয় সারাদেশ সংক্ষুব্ধ। সুতরাং রায় বাতিল হোক’।
জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় হয়ে যাওয়ার পর তা জনগণের সম্পদ হয়ে যায়। সে সম্পদ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হতে পারে। তা কোনোভাবেই আদালত অবমাননা নয়, অন্যায় নয়। এ রায়ে জাতীয় সংসদকে কটাক্ষ করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করা হয়েছে। সুতরাং এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিষয়বহির্ভূত ও অপ্রাসঙ্গিক। মুক্তিযুদ্ধ ও জনগণের শক্তিকে ম্লান করার জন্যই এ রায় দেয়া হয়েছে’।
‘ষোড়শ সংশোধনী থাকলেও ক্ষতি ছিল না বরং বিচারপতিদের কেউ একে অন্যের প্রতি অবিচার করলে তার সঠিক বিচারের সুযোগ ছিল। সুতরাং এ রায় বাতিল হওয়া জরুরি’-বলেন ইনু।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘এ রায়ে জনগণের অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। সংবিধানে আছে সবকিছুর মালিক জনগণ। সুতরাং জনগণের প্রতিনিধিদের হাতেই ক্ষমতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বলা যায় রায় সংবিধান পরিপন্থী। আর ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে এতে করে স্বাধীনতাবিরোধীদের উস্কানি দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে অমীমাংসিত অবস্থানে নিতে চাইছে। সুতরাং এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি।
এসময় ১৪ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।
এইউএ/জেডএ/পিআর